এক কেজি প্লাস্টিকের বিনিময়ে ৬টি ডিম। ৪ কেজি প্লাস্টিক দিয়ে এক লিটার সয়াবিন তেল কিংবা মুরগি-মাছ। চট্টগ্রামে প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ নামে এমনই কর্মসূচি শুরু করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। সোমবার সকালে নগরের কর্ণফুলী নদীর পাড় সংলগ্ন বাকলিয়া স্টেডিয়ামে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এক বছর ধরে চলবে কর্মসূচিটি। প্রকল্পের অধীনে নগরের পতেঙ্গা ও হালিশহরে দুটি স্থায়ী স্টোর চালু থাকবে। এছাড়া ৫০টি ভ্রাম্যমাণ বাজার ক্যাম্প হবে। যেখানে প্রতি ইভেন্টে ৫ শতাধিক পরিবার প্লাস্টিক জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে পারবেন।
কর্মসূচির প্রথম দিনেই ৫ মেট্রিক টন পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সংগ্রহ করা হয়। প্রকল্পের মাধ্যমে ২ লক্ষ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দাম ২০-২৫ টাকা, তবে বিদ্যানন্দ দিচ্ছে ৫০-৮০ টাকা পযন্ত দাম। স্টোরগুলোতে এক কেজি প্লাস্টিক দিয়ে ৬টি ডিম এবং ৪ কেজি প্লাস্টিক দিলে পাওয়া যাবে ১ লিটার সয়াবিন তেল কিংবা ১টি মুরগী অথবা মাছ। এছাড়াও শিক্ষা সামগ্রী, কাপড়, স্যানিটারি প্যাডসহ ২২ ধরনের নিত্যপণ্যের সমাহার থাকছে এই সুপারশপে। এই কার্যক্রমে সহযোগিতা দিচ্ছে চসিক।
অনুষ্ঠানে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, যেকোনো সমস্যা সমাধানে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেওয়া সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। নদীমাতৃক এই দেশের প্রাণপ্রবাহ বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি প্লাস্টিক দূষণে বিপন্ন প্রাণীকূলকে রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। এই পৃথিবীকে সম্পূর্ণ দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য রাখতে হলে সচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই। বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে প্লাস্টিক দূষণ থেকে রক্ষা করতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিদ্যানন্দের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা এতই ব্যাপক যে এটি সরকারের একার পক্ষে রোধ করা একেবারেই অসম্ভব। এই দূষণ কমাতে দরকার ব্যাপক জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। তাই মানুষকে সম্পৃক্ত করতেই সারাদেশে প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক চুয়েটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বন্দর নগরীর মানুষ প্রতিদিন ৩ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদন করে। এর মধ্যে ২৫০ টন (৯ শতাংশ) প্লাস্টিক এবং পলিথিন বর্জ্য। এর মধ্যে থেকে প্রতিদিন ১৫০ মেট্রিক টন বর্জ্য খাল ও নর্দমায় গিয়ে পড়ে। তাছাড়া, সিপিডির এক গবেষোণা বলছে, দেশের উপক‚লীয় নদ-নদীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে। যা বন্দর নগরীর জন্য খুবই উদ্বেগজনক।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল