অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি এমপি বলেছেন, পরিবার থেকেই হিংসা করা শিখছে শিশুরা। বড় হয়ে তারা সেটার প্রয়োগ ঘটাচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। তিনি বলেন, যে মেয়ে পরিবারের কাছ থেকে দাদী, ফুপুকে হিংসা করতে শেখে, পরবর্তীতে বড় হয়ে সে ননদ, শাশুড়ি বা অন্যদের সঙ্গে হিংসা করে। এভাবে হিংসা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে বিস্তার লাভ করে।
শনিবার বিকেলে ইডব্লিউএমজিএল- এর কনফারেন্স রুমে বাংলাদেশ প্রতিদিন আয়োজিত 'আমাদের শিশু আমাদের দায়িত্ব' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। বসুন্ধরা গ্রুপের টিভি চ্যানেল নিউজ টুয়েন্টিফোর'র হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স সামিয়া রহমানের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম।
সাংসদ এমিলি বলেন, আমিও একজন মা। আমি একজন শিক্ষকও। আমাদের শিশু আমাদের ভবিষ্যৎ। শিশুদের যেভাবে গড়ে তুলব, সেভাবে তারা সমাজ ও দেশ চালাবে। পরিবার থেকে নানা সমস্যা আসছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা বাবা-মায়ের ঝগড়া দেখে বড় হচ্ছে। হয়ত স্বামী স্ত্রীকে বলছেন, 'তোমাকে বিয়ে করে জীবন শেষ'। আবার স্ত্রী স্বামীকে বলছেন, 'তোমার ঘরে এসে জীবন শেষ'। এর নেতিবাচক প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। অনেক সময় সন্তান হয়ত একটা ফুল দেখে এসে মাকে সেটা বলল, মা আগ্রহ না দেখিয়ে উল্টো তাকে রাগ করলো। কারণ কিছুক্ষণ আগেই হয়ত ওই মা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করেছে। এতে ওই শিশুটার মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হবে।
তিনি বলেন, অনেক সময় বাচ্চার সামনে আমরা মিথ্যা বলি। বাচ্চাকে শেখাই একটা, নিজেরা করি আরেকটা। এটা ওই শিশুর মধ্যে জটিলতা তৈরি করে। দেখা যায় বাসায় কেউ আসলে নিজে ঘরে থেকেও অন্যকে দিয়ে বলাই, 'বাসায় নেই'। এগুলো শিশুরা দেখে। তাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা দেখে আমাকে বলছে একটা করতে, তারা করছে আরেকটা।
অন্যের সঙ্গে তুলনা করার প্রবণতা ভীষণ ক্ষতিকর উল্লেখ করে অধ্যাপিকা এমিলি বলেন, আমরা উপার্জনক্ষম ব্যক্তির উপার্জনে সন্তুষ্ট নই। শুধু তুলনা করি। ওই বাসায় এটা কিনেছে, ওরা এইটা করেছে, ওদের বাচ্চা এত নম্বর পেয়েছে- সারাক্ষণ এমন চিন্তায় মশগুল থাকি। এটা যে কত বড় ক্ষতি করে তা বলে বোঝানো যাবে না। কেন সবাই এত দ্রুত বড়লোক হতে চায়? 'তোমাকে ফার্স্ট হতে হবে'- এর চেয়ে খারাপ কিছু আর নেই।
সবার আগে বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মানসিক চিকিৎসা দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি। শিশুদের মানুষের সামনে শাসন না করার পরামর্শ দিয়ে এই মা, শিক্ষিকা ও সংসদ সদস্য বলেন, অন্যের সামনে শাসন করলে শিশুরা ভীষণভাবে অপমানিত বোধ করে। এটা তার মধ্যে খারাপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। অভিমানে অনেক সময় অপ্রত্যাশিত কিছু করে ফেলতে পারে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, নূরজাহান বেগম মুক্তা এমপি, আমাদের অর্থনীতি'র সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন'র প্রধান নির্বাহী অ্যাড. এলিনা খান, উইমেন এন্ট্রারপ্রিনিয়রস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাসরিন আউয়াল মিন্টু, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, রাজনীতিক শামা ওবায়েদ, নিউজ টুয়েন্টিফোর'র প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি'র অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুলতানা রহমান, শিক্ষক ফাহিমা খানম চৌধুরী মনি, কবি মোহন রায়হান প্রমুখ।
বিডি-প্রতিদিন/ ১২ মার্চ ১৬/ সালাহ উদ্দীন