রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রকৃত গণপরিবহনে রূপ নিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে স্পিড ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে ঢাকা-চট্টগ্রামে দ্রুত সময়ে যাওয়া-আসা সম্ভব হবে।
বৃহস্পতিবার পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘নান্দনিক চট্টগ্রামের নন্দিত নাগরিক’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি চট্টগ্রামসহ সারাদেশের রেল ব্যবস্থার উন্নয়নে নেয়া গুচ্ছ পরিকল্পনা তুলে ধরে রেলের সেবা আরও বাড়ানোর ঘোষণাও দেন। এছাড়া চট্টগ্রামকে নান্দনিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও জানান ফজলে করিম চৌধুরী।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রসঙ্গে ফজলে করিম বলেন, আমি চট্টগ্রামের মানুষ, দেশকে ভালোবাসি, চট্টগ্রামকেও ভালোবাসি। চট্টগ্রামের উন্নয়নে সমন্বিত পরিকল্পনা নেই। উন্নয়নে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এ এলাকার সকল সাংসদ ও নীতি নির্ধারকরা মিলিয়ে চট্টগ্রামের সমন্বিত উন্নয়নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশাল ফান্ড চাইব। আন্তরিকভাবে কাজ করলে দুই-তিন বছরে চট্টগ্রামকে সিঙ্গাপুর শহরের আদলে করা যায়। তবে এক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে রাউজানের এ সংসদ সদস্য বলেন, রেলওয়েকে আরো আধুনিকায়ন করতে সময়ের প্রয়োজন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্রুত চলাচলের জন্য স্পিড ট্রেন পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে করে দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি ঢাকা যাওয়া কিংবা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসা সম্ভব হবে। এ কাজে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার দরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এক্ষেত্রে নীতিগগত সম্মতিও দিয়েছেন। এছাড়া আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের ঘুনধুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। দ্রুত শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছি।
রেলওয়ের সার্বিক কাজে আরো গতিশীলতা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেলওয়ের সেবা এখনো সাধারণ জনগণ পর্যাপ্তভাবে ভোগ করতে পারছেন না। পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে রেলস্টেশনে টিকিট ছাড়া কোনো লোক প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে আমাদের স্টেশনগুলোতে অপ্রয়োজনে মানুষ ঘোরাফেরা করে কিংবা স্টেশনের বিভিন্ন স্থান দখল করে থাকে। এতে যেমন টিকিটধারী যাত্রীদের সমস্যা হয় তেমনি নিরাপত্তারও সমস্যা হতে পারে।
এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শীঘ্রই স্টেশনগুলোতে স্ক্যানিং মেশিনসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সংযোজন করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে রেলের অভ্যন্তরে মোবাইল কিংবা ল্যাপটপ দিয়ে যাতে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলা যায়, সে উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন রেল লাইনগুলোকে মিটার গেজ থেকে ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজে উন্নীতকরণসহ রেলের বগির রঙ লাল-সবুজ করা হয়েছে। পূর্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ছিল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় রেলের সেবার মান বাড়াতে আলাদা মন্ত্রণালয় করা হয়েছে।
সংবাদপত্র দেশের মানুষকে দিক নির্দেশনা দেয় উল্লেখ করে ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা তাদের লেখনীর মাধ্যমে কি ভুল হচ্ছে তা ধরিয়ে দেন। আপনারা (সাংবাদিকরা) বললে সরকারের কানে যায়। সরকার বুঝতে পারে কি করা দরকার। তিনি বলেন, আমার কিছুর অভাব নেই। মানুষের জন্য রাজনীতি করছি, পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। চট্টগ্রামের রাউজানে ১৮২টি স্কুলে দুপুরে প্রতিদিন ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে খাওয়ানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানকার মানুষের জন্য দুটি উপ-শহর করেছি, কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পনগর করছি, যেখানে অর্ধ লক্ষেরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হবে। মানুষের জন্য কাজ করতে তিনি সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের সম্পাদক সৈয়দ উমর ফারুক, দৈনিক নয়া বাংলার সম্পাদক জিএম এনায়েত উল্লাহ খান, রাউজানের উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আলী আব্বাস।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। ফজলে করিম চৌধুরীর জীবনী পাঠ করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী। অনুষ্ঠান শেষে প্রধান অতিথি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জন্য ২৫০ কেভি জেনারেটর হস্তান্তর করেন।