দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর কারাগারে আটক রেলওয়ের সেই আলোচিত জিএম ইউসুফ আলী মৃধা অবশেষে জামিনে মুক্তি লাভ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা (দুদক) ১১ মামলায় গ্রেফতার হয়েছিল মৃধা। আলোচিত রেলের এ কর্মকর্তার জামিনের খবরে রেল অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই মন্তব্য করছেন, রেলের নিয়োগ দুর্নীতিতে এসব আলোচিত কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তি না দিয়ে আইনের ফাকঁ দিয়ে কৌশলে জামিনে বের হয়ে প্রকাশ্যে মাঠে না আসলেও তাদের প্রেতাত্বারা নানাভাবে সক্রিয় হয়ে উঠে। ফলে সেই মৃধার কালিমা আসলে মুছন হবে কিনা সেই প্রশ্ন রেল সংশ্লিষ্টদের মাঝে।
গত রবিবার রাতে ইউসূফ আলী মৃধা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে বের হয়েছেন বলে জানান কারাগারের জেলার মো. মুজিবুর রহমান। এর আগে একইদিন চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিন সর্বশেষ দুটি মামলায় জামিন লাভ করেন। রবিবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের গুডস অ্যাসিটেন্ট ও কোর্ট ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তাকে জামিন দেয় আদালত। এর আগে গত জুলাই মাসে পূর্ব রেলওয়ের কার্পেন্টার, ডেটা এন্ট্রি কন্ট্রোল অপারেটর, ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস, রেকর্ড কিপার ও শরীর চর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগ দুর্নীতির পাঁচ মামলায় জামিন পান মৃধা। পরে তিনি টুল কিপার, টিকেট ইস্যুয়ার, ট্রেন নম্বর টেকার, সহকারী লোকো মাস্টার পদ নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় জামিন পান।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জামিন সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়ার পর সবকিছু যাছাই-বাছাই করেই মুক্তি দেয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এসব মামলার বাইরে পূর্বাঞ্চল রেলের সহকারী কেমিস্ট ও ফুয়েল চেকার পদে নিয়োগ দুর্নীতির দুটি মামলায় অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল মৃধাসহ তিন আসামিকে দুই বছর করে সাজা দেয় আদালত। তার আগে গত বছরের ৩ আগস্ট অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলায় ঢাকার আদালতে মৃধার তিন বছরের সাজা হয়।
কিন্তু তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে থাকায় ইউসুফ আলী মৃধার সেসব সাজার মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ১১টি মামলার মধ্যে চারটির বিচার চলছে, পাঁচটিতে দুদক অভিযোগপত্র দিয়েছে এবং দুটি এখনো তদন্তাধীন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার বিজিবি সদর দপ্তরে সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী ওমর ফারুক তালুকদারকে বহনকারী গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলাপাড় শুরু হলে সেই গাড়িতে থাকা মৃধাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই গাড়িতে ৭০ লাখ টাকা ছিল- যা আদায় করা হয় রেলের ‘নিয়োগ বাণিজ্যের’ মাধ্যমে। এরপর ২০১০ থেকে ২০১২ সালেল মধ্যে পূর্বে রেলের বিভিন্ন পদে নিয়োগ অনিয়মের অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় ১৩টি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকায় একটি মামলা করে দুদক। ২০১৪ সালের ৩ মার্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে ইউসুফ আলী মৃধাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার