সাভার পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকায় বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। কিন্তু মশা নিধনে বিশেষ নজর নেই পৌরসভার। আর এ নিয়ে পৌরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক অসন্তোষ। সন্ধ্যা কিংবা রাত নয় দিনেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছে না মানুষের।
পৌরসভারসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন মশা নিধনে কার্যক্রম না থাকায় বেড়েছে মশার বংশ বিস্তার। মশার দংশন শুধু মানুষই নয়, গৃহপালিত পশুরাও নেই স্বস্তিতে। বেকায়দায় রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা। মশার যন্ত্রণায় পৌরবাসীসহ বিভিন্ন এলাকার জনজীবন বিরক্ত-অতিষ্ঠ হলেও মশার বিস্তার ও নিধনে চোখে পড়ার মতো কোন কার্যক্রম নেই কর্তৃপক্ষের।
পৌরবাসীর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে নজরে আসছে না মশা নিধন কার্যক্রম। সাম্প্রতিক সময়ে আমগাছে বিষ প্রয়োগ করার ফলে পাড়ায় পাড়ায় মশা বেড়েছে দ্বিগুণ হারে। এছাড়া পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ড্রেন-নর্দমায় পানি জমে তা মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। এতে করে মশাবাহিত ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে। মশার কয়েল জ্বালিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না মানুষ। শিশু, বৃদ্ধ, হাসপাতালের অসুস্থ রোগীরা এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে কর্তৃপক্ষের কাছে মশা নিধনে দৃশ্যমান উদ্যোগ প্রত্যাশা করছে।
গেন্ডা এলাকাবাসী তছিরন বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ড্রেনে পানি জমে মশার উপদ্রব বেড়েছে দ্বিগুণ। পৌরসভার উচিত ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা পাশাপাশি মশা নিধনে তেল দিয়ে স্প্রে করা।
আবর্জনা ফেলার কোনো নির্দিষ্ট স্থান বা কনটেইনার না থাকায় এসব খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলা হয়। পানিতে সেই আবর্জনা আর আগাছা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। কিছু কিছু এলাকায় সড়কও ভাঙা। মাঝে মাঝেই খানাখন্দ।
সাভার পৌরসভা প্রথম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। সর্বশেষ পৌর নির্বাচন হয়েছে। মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আওযামী লীগ নেতা আব্দুল গনি মিয়া। জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ সম্পর্কে তিনি বলনে, এই এলাকাটি একটু নিচু। পৌরসভার ভেতরে আগে অনেক ডোবা, পুকুর প্রাকৃতিক জলাশয় এসব ছিল। জায়গার দাম বেড়ায় যাওয়ায় লোকে বাইরে থেকে মাটি এনে এসব জলাশয় ভরাট করে ফেলেছে। ফলে পানি যাওয়ার জায়গা নেই। তা ছাড়া অসংখ্য দালানকোঠা হচ্ছে। তাতে পানির প্রবাহও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সাভার পৌর মেয়র আব্দুল গনি মিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে অভিযোগ করে বলেন, সাভার পৌরসভার উন্নয়ন বরাদ্দ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কেটেছেঁটে কমিয়ে দেওয়া হয়। সাভার প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও বার্ষিক উন্নয়নের জন্য ৬০ থেকে ৮০ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ পায় না। অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা অনুষ্ঠানে চিকুনগুনিয়া জীবাণুর বাহক এডিস মশা ও মশার উপদ্রব নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ব্যর্থতার ব্যাখ্যা দেন। মেয়রের মতে, পর্যাপ্ত বাজেট, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি থাকার পরও বাহ্যিক কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে শহরের মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
মেয়র বলেন, মশার উৎপাত বন্ধে সিটি কর্পোরেশনে ঔষধ আনা হয়, এখন পাওয়া যায় না । প্রতিবছর অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। তবুও কোনো কাজে আসছে না।
মশা নিয়ন্ত্রণে কচুরিপানা, জলাশয়, পুকুর, ডোবা, লেকসহ বিভিন্ন এলাকা পরিষ্কার করছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, ‘কিন্তু আমাদের এলাকার বাইরের অনেক জায়গার জলাশয়ে মশা জন্মাচ্ছে, যেখানে আমরা মশার ওষুধ দিতে পারছি না। নগরের ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলার কারণে নগরের দূষণ বাড়ছে, সেখানেও মশার বিস্তার ঘটছে।’
গনি বলেন, ‘টাকা বরাদ্দ আছে, কাজ করছি। কিন্তু আমাদের আওতার বাইরের এলাকা, সাভার ক্যান্টনমেন্ট ও সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকাসহ বেশ কিছু এলাকায় মশার ওষুধ দেওয়া হয়। আর আমাদের পৌরসভার এলাকার মশার ঔষধ দেওয়া সম্ভব হয় না। সেখানে চাইলেও ওষুধ দিতে পারি না। আর মশার কোনো এলাকা নেই। তারা জন্ম নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে আমাদের বরাদ্দ থাকার পরও অভিযানে আমরা সফল হতে পারছি না।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডা. আমজাদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মশাবাহিত ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি অসুখ-বিসুখ ছড়িয়ে পড়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে। মশার কয়েল জ্বালিয়েও রেহাই পাচ্ছেন না মানুষ। শিশু, বৃদ্ধ, হাসপাতালের অসুস্থ রোগীরা এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে কর্তৃপক্ষের কাছে মশা নিধনে দৃশ্যমান উদ্যোগ প্রত্যাশা করছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল