জন্মের পর চার দেয়ালে বেড়ে ওঠা। স্কুল শুরু হলে সেখানেও ঘেরা কংক্রিটের দেয়াল। যেন বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার একটা শূন্যতা। চারদিক আবদ্ধ, যেন দম বন্ধ। রাজধানীতে বেড়ে ওঠা শিশুরা এমন পরিবেশেই বেড়ে উঠছে। ফার্মের মুরগি যেমন ছোট্ট খোপে বন্দী থাকে, ঠিকমতো নড়াচড়াও করতে পারে না, আমাদের শিশুদের অবস্থাও হয়েছে তেমনই। ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী।
কিন্তু এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের সন্তানরা বেছে নিচ্ছে প্রযুক্তি পণ্য। কম্পিউটার-মোবাইল গেমস আর টেলিভিশনের কার্টুন কেড়ে নিচ্ছে খোলা পরিবেশে বেড়ে ওঠার মানসিক বিকাশের সুযোগ।
জাতিসংঘের শিশু সনদে বলা হয়েছে, শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ রক্ষা ও সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। জাতীয় শিশুনীতি ও শিক্ষানীতিতেও শিশুর বিকাশ নিশ্চিত করার জন্য অনেক কথা বলা হয়েছে। অথচ বাস্তবে হচ্ছে উল্টোটা। সুযোগ সৃষ্টি তো হচ্ছেই না, যেটুকু সুযোগ আছে, তা-ও রক্ষা করা যাচ্ছে না। না আছে খেলাধুলা বা শরীরচর্চার সুযোগ, না আছে মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ। বিদ্যা অর্জন বা বিকশিত হওয়ার জন্য সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন দু’টিই জরুরি। তাহলে আমাদের শিশুরা কি সুস্থ ও সুন্দরভাবে বিকশিত হচ্ছে? উত্তর ইতিবাচক হওয়ার অবকাশ খুবই কম। বিশেষ করে নগর-মহানগরের শিশুদের বিকাশ যে কাঙ্খিত পর্যায়ে হচ্ছে না, তা আজ স্বীকৃত সত্য। কেন তাদের আমরা খেলার মাঠ দিতে পারছি না? কেন তাদের মানসিক বা সাংস্কৃতিক বিকাশের উপযোগী পরিবেশ দিতে পারছি না? এই প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়া খুবই জরুরি।
কিন্তু এই যে, শিশুরা খোলামেলা পরিবেশে বড় হতে পারছে না, এটি কি কেবল সন্তানদেরই সমস্যা? নাকি আমরাই তাদের বাধ্য করে দিচ্ছি। যদি রাজধানীর কথাই ধরি, এর জন্য আমরাই দায়ী। এমনিতেই এই শহরে পর্যাপ্ত খোলা মাঠের অভাব, তার ওপর যে কয়টি রয়েছে সেগুলো এতো নোংরা যে, শিশুরা খেলতে পারা তো দূরের কথা, বড়রাও হাঁটাচলা করতে পারে না। রাজধানীতে যে কয়টি খোলা মাঠ বা স্থান রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকলে সেই চাহিদা হয়তো কিছুটা হলেও মেটানো সম্ভব হতো।
সম্প্রতি, এ সংক্রান্ত একটি সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে এমনই চিত্র ফুটে উঠেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, দুটি শিশু অপরিচ্ছন্ন মাঠে নিজেদের মতো করে খেলাধুলা করছে এবং সেখানে থাকা নোংরা কাগজপত্রকেই খেলার অনুষঙ্গ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এই দৃশ্য একজন বিবেকবান মানুষকে নিশ্চয়ই আহত করে। ডেটল-হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ এর করা এই বিজ্ঞাপনে শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য একটি সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন খোলা পরিবেশের প্রয়োজনীয়তার কথাই উঠে এসেছে।
ভিডিওটিতে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ ক্যাম্পেইনের দূত চিত্র নায়ক রিয়াজ বলেন, “আমরা যদি রাস্তাঘাটে, যেখানে সেখানে অবাধে ময়লা ফেলতে থাকি তাহলে দেখা যাবে একদিন এই ময়লাই হবে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ। আসুন আমরা নিজ নিজ সন্তানের কাছে করি অঙ্গীকার রাখবো দেশ পরিষ্কার।
তিনি আরো বলেন, চলুন আজই আমরা নিজ নিজ সন্তানদের কাছে অঙ্গীকার করি এখন থেকে নির্ধারিত স্থানেই ময়লা ফেলবো ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি সুন্দর ও সুস্থ বাংলাদেশ দিবো। আমাদের সন্তানেরা বেড়ে উঠুক এক সুন্দর পৃথিবীতে। সপ্তাহখানেক আগে রিলিজ হওয়া হৃদয়স্পর্শী এই বিজ্ঞাপনটি ইতোমধ্যেই ১০ লাখেরও বেশি মানুষ দেখেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন