২১ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:৪৮

'কিচ্ছু নাই রে ভাই, সব পুড়ে শেষ'

অনলাইন প্রতিবেদক

'কিচ্ছু নাই রে ভাই, সব পুড়ে শেষ'

টিকাটুলিতে রাজধানী সুপার মার্কেটের আগুন গতকাল বুধবার ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন নিভে গেলেও আহাজারি কাটেনি ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের। ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিকদের কেউ কেউ চিৎকার করে কেঁদে উঠছেন, কেউবা সব হারিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন। তারা এখন কী করবেন যেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না।

গতকাল বুধবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটের দোতলার পশ্চিম দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মার্কেটটি টিনশেডের হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় রাত সোয়া ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে মার্কেটের অর্ধশত দোকান পুড়ে ভস্মীভূত হয়।

আগুন নেভানোর সময় ধোঁয়ায় মমিন নামে এক নিরাপত্তাকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্র্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। আগুন লাগার পর অভিসার সিনেমাহল-সংলগ্ন রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। উৎসুক মানুষের প্রচন্ড  ভিড় থাকায় ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে উৎসুক জনতার ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেন। রাজধানী সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশের দোতলার একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো মার্কেটে। আগুনের ধোঁয়ায় পুরো টিকাটুলি এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বহুদূর থেকেও আগুন ও ধোঁয়া দেখা যায়। 

রাজধানী সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আবু বকর জানান, মার্কেটের দোতলার পশ্চিম পাশে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা বাইরে বেরিয়ে আসি। সেখানে বেডশিট, কাপড়, কসমেটিক্স, টেইলার্স ও সোনার দোকান ছিল। অল্প সময়ের মধ্যে আগুন পুরো দোতলায় ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে অন্তত ১৮০টি দোকান ছিল। এর মধ্যে ৩০-৩৫টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বিকাল সোয়া ৫টার দিকে টিনশেড ওই মার্কেটে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট পাঠানো হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরও ইউনিট চাওয়া হলে যথাক্রমে ৬, ২ ও ৩টি ইউনিট পাঠানো হয়। আগুন নেভাতে মোট ২৫টি ইউনিট কাজ করে। ফায়ার সার্ভিসের ১৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন। এ ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যরা ও স্বেচ্ছাসেবীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে সহযোগিতা করেছেন। 

প্রত্যক্ষদর্শী শাহ পরান দোকানের মালিক শাহ পরান জানান, নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের দোতলায় তার দোকান। তার দোকানের সামনে প্রবেশ গেটের কলাপসিবল গেটে ঝালাইয়ের কাজ চলছিল। তার দোকানের পাশেই একটি ফোম বিক্রির দোকান। ঝালাইয়ের কাজ করার সময় ওয়েল্ডিং থেকে আগুনের ফুলকি দোকানের সামনে রাখা ফোমে পড়ে আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ফোমের মধ্যে কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। তখন সবাই আগুন আতঙ্কে চারদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ক্রেতারাও আত্মরক্ষার্থে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকেন।

আল মাহের জুয়েলার্সের মালিক আবু তাহের জানান, নিচতলায় তার দোকানসহ মোট ৪৩টি গহনার দোকান আছে। আগুন লাগার পর প্রাণ নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় শাটার নামানো হলেও অনেকে তালা মারতে পারেনি। তাহেরের ধারণা মার্কেটের দোতলায় মাঝ বরাবর আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে পোশাক, টেইলার্স, ফোম, কসমেটিকস, খেলনা ও খাবারের দোকান ছিল।

রাজধানীর টিকাটুলি এলাকায় রাজধানী সুপার মার্কেটে আগুন লাগলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নজরুল ইসলামের হোল সেলের কসমেটিকসের দোকান আল মদিনা। কেউ একজন তাকে ক্ষয়-ক্ষতির কথা জিজ্ঞেস করলে চিৎকার করে কেঁদে উত্তর দেন, 'কিচ্ছু নাই রে ভাই, আর কিচ্ছু নাই!'

২৬২, ২৬৭ এবং ২৬৭৮ নম্বর দোকান নিয়ে ছিল তার পাইকারি কসমেটিকসের ব্যবসা। সন্ধ্যায় মার্কেটে লাগা আগুন ছিনিয়ে নেই তার স্বপ্নগুলোও। তবু কেঁদে কেঁদে বলে ওঠেন নজরুল, প্রায় দুই কোটি টাকার মালামাল ছিল দোকানে! আর কিচ্ছু নাই রে ভাই! সব পুড়ে শেষ!'

 


বিডি-প্রতিদিন/ সিফাত আব্দুল্লাহ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর