বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবির ধর্মঘটে স্থবির হয়ে গেছে পুরান ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ চলাচল।
শুক্রবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তারা। এতে ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পাশাপাশি চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিসহ ৩৩ নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সদরঘাটের পাশে দক্ষিণাঞ্চলের পণ্যবাহী ট্রলার শ্যামবাজারে না আসায় কাঁচা তরকারীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।
শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবিগুলো হলো ১. বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি, ডাকাতি বন্ধ করা। ২. ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান। ৩. ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস এবং মালিক কর্তৃক খাদ্য ভাতা প্রদান। ৪. সব নৌযান শ্রমিকদের সমুদ্র ও রাত্রিকালীন ভাতা নির্ধারণ। ৫. এনড্রোস, ইনচার্জ, টেকনিক্যাল ভাতা পুননির্ধারণ। ৬. কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপুরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ। ৭. প্রত্যেক নৌশ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান। ৮. নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন। ৯. মাস্টার/ড্রাইভার পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও সনদ নবায়ন, বেআইনি নৌ চলাচল বন্ধ করা। ১০. নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ এবং ১১. নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
জানা যায়, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে সদরঘাটে এসে বিপাকে পড়েছে যাত্রীরা।
নিয়মিত রুটের লঞ্চ চলাচল না করলেও বিকল্প ব্যবস্থায় সীমিত সংখ্যক লঞ্চ চলাচল করছে। অনেক যাত্রী কাঙ্খিত লঞ্চ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে। চাদপুর ঘাটে চাদপুরের সিডিউলের লঞ্চ দেখা যায়নি। সুরেস্বর, শৌলা, মুলাদী, দুলারচর লঞ্চ চলাচল বন্ধ দেখা গেছে। বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিসহ অন্যান্য লঞ্চ সদরঘাটে নোঙ্গর করা করা। এছাড়া পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় সদরঘাটের পাশে কাঁচা তরকারী পণ্যের পাইকারী বাজার শ্যামবাজার স্থবির হয়ে পড়েছে। এর ফলে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের অফিস সচিব রাকিব হাসান শাওন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শ্রমিকদের নায্য পাওনা আদায়ে এ ধর্মঘট। নৌযান মালিক ও সরকার বারবার আমাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মেনে নেন, কিন্তু বাস্তবায়ন করেন না। গত জুলাইয়ে আমরা আন্দোলন শুরু করার পর সরকার ও মালিকদের পক্ষ থেকে আমাদের বলা হলো, দাবি মানা হবে। কিন্তু তারা ওয়াদা ভঙ্গ করেছে, তাই ধর্মঘটে বাধ্য হয়েছি। এবার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহার করবো না। মালিক পক্ষ দাবি মেনে নিলে ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নৌযান শ্রমিকদের মূল দাবি তাদের মালিকদের সাথে, আমাদের কাছে যেসব দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে তা বাস্তবায়নাধীন। এই সময়ে তাদের এই ধর্মঘট উদ্দেশ্যমূলক। সরকার তাদের দাবি পূরণে ৩ মাস সময় দিয়েছে, তা মালিকরা পূরন করার কথা। তবে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে অন্যান্য দিনের তুলনা যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী লঞ্চ ২০ শতাংশ কম চলছে বলে জানান তিনি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন