রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশেই নগরীর মুন্সিপাড়া এলাকা। ওই এলাকার বাসিন্দা আবু মিয়া হৃদরোগে আক্রান্ত হলে রবিবার রাতে হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যান। লাশ বাড়িতে নিতে হবে। মৃতের ভাতিজা শাহাজান হোসেন রতন লাশ বাড়িতে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করতে গিয়ে হোঁচট খেলেন।
পথের দূরত্ব এক কিলোমিটারের একটু বেশি হবে। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ভাড়া চাইলেন ৩ হাজার টাকা। পরে অনেক দর কষাকষি করে দেড় হাজার টাকায় লাশ বাড়িতে আনেন। কামালকাছনা এলাকার মোতাহার হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের লাশ বাড়িতে আনতে গিয়ে একই রকম বিড়ম্বনায় পড়েন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাশ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সের দালালচক্র সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে শকুনের মতো ঘোরে। মুমূর্ষু রোগী দেখলেই তারা বুঝতে পারেন রোগীটি কখন মারা যাবে। মারা যাওয়ার পর শুরু হয় টানাটানি। হাসপাতাল চত্বরে অবস্থানরত দালাল চক্রের অ্যাম্বুলেন্সেই মৃতদের লাশ বহন করতে হবে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ায়।
বাইরে থেকে কেউ লাশ বহনের জন্য গাড়ি আনলে তাতেও বাধা দেয়া হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়। মারা যাওয়ার পর লাশ নিয়ে প্রতিদিনই ঘটছে এমন বিড়ম্বনা। হাসপাতালের ক্যাম্পাসে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী অ্যাম্বুলেন্স স্টান্ড। ওখানে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স অবস্থান করে। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আমলে নিচ্ছেন না। এ অবস্থা চলছে বছরের পর বছর।
লালমনিরহাটের এক রোগীর স্বজন নাইম হোসেন জানান, লালমনিরহাটের সাধারণ ভাড়া ৩ হাজার টাকার ওপরে নয়। কিন্তু তার আত্মীয়র লাশ আনতে অ্যাম্বুলেন্সের দালালরা ৬ হাজার টাকা নিয়েছে। হাসপাতালে কয়েকজন যুবক ও কর্মচারীদের কয়েকজন নেতা একটি সিন্ডিকেট করে তারা লাশের স্বজনদের জিম্মি করে কয়েকগুণ টাকা আদায় করে নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে দুপুর পর্যন্ত ৪টি লাশ হাসপাতাল থেকে বের হয়েছে। দালালচক্রের হুমকিতে লাশের স্বজনরা বাধ্য হয়ে দালালদের অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়েছেন।
এ বিষয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রোস্তম আলী জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই