শিরোনাম
১০ জুন, ২০২৩ ১৩:০২

গাজীপুর থেকে শিক্ষা নিয়ে মাঠে আওয়ামী লীগ

সিটি নির্বাচন

রাহাত খান, বরিশাল

গাজীপুর থেকে শিক্ষা নিয়ে মাঠে আওয়ামী লীগ

আর মাত্র এক দিন পর বরিশাল সিটিতে ভোট। আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। কে হবেন আগামীর বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র- এ আলোচনা এখন সর্বত্র। ঘাম ঝরাচ্ছেন মেয়র প্রার্থীরা। শেষ মুহূর্তে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররা। দলীয় মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা অলিগলিতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। ধারাবাহিক বৈঠক করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন আর প্রতীকী নৌকায় সাজসাজ অবস্থা। এর আগে এত পোস্টারিং দেখেনি নগরবাসী। নির্বাচনী আইন মেনে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে রশিতে ঝুলিয়ে। এ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সংঘাত না হওয়ায় উৎসবের কমতি নেই সিটি নির্বাচন ঘিরে। সব মিলে ভোট জমেছে বরিশালে।

জানা গেছে, এ নির্বাচনে বেশি ভাবাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে। কারণ গাজীপুরের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য সতর্ক আওয়ামী লীগ। এজন্য একঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতা এখন বরিশালের অলিগলি চষে বেড়াচ্ছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার ব্যাজ ঝুলিয়ে ‘ভোট চাওয়া’ হয়েছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের পক্ষে। যে কারণে বিপাকে ফেলেছিল দলের প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে। গাজীপুরের শিক্ষা নিয়ে বরিশালে নৌকার জয় চান ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের নানা অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

সকাল থেকে গভীর রাত অবধি প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে শেষ জুমার দিন প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তারা। নিজের পক্ষে ভোট টানতে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রার্থীরা। নতুন বরিশাল গড়তে ভোট চাইছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। উৎপাদনমুখী এবং আইটি সিটি গড়তে ভোট চাইছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। অন্যদিকে শান্তিময় শিক্ষার নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীম। এদিকে সরকারবিরোধী ভোট চাইছেন বিএনপির প্রয়াত মেয়রপুত্র কামরুল আহসান রূপণ। অন্য তিন প্রার্থীও ভোট চাইছেন নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে।

হঠাৎ কেউ বরিশাল নগরীতে এলে চমকে যেতে পারেন। পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন আর প্রতীকী নৌকায় সাজসাজ অবস্থা। এর আগে এত পোস্টারিং দেখেনি নগরবাসী। নির্বাচনী আইন মেনে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে রশিতে ঝুলিয়ে। এ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো সংঘাত না হওয়ায় উৎসবের কমতি নেই সিটি নির্বাচন ঘিরে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী তাঁর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও কারচুপির আশঙ্কা করছেন বিরোধী মেয়র প্রার্থীরা। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এবারের সিটি ভোটের আগে সবশেষ জুমায় নিজেদের আরও একবার ঝালিয়ে নিয়েছেন প্রধান মেয়র প্রার্থীরা। তাঁদের পক্ষে অলিগলির বাসাবাড়ির দরজায় কড়া নেড়েছেন কর্মীরা। প্রার্থীদের প্রচারণা দুপুরের ঘুম কেড়ে নিয়েছে নগরবাসীর। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রার্থীদের মাইকিংয়ের উচ্চশব্দে কান ঝালাপালা বাসিন্দাদের। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনের মাঠে কাজ করছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেনসহ অনেকে। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা এবং বিভাগের ছয় জেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও জহিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম রহমান পারভেজসহ অনেকে। প্রার্থীর ছোট ভাই এক যুবদল নেতার অনেক অনুসারীও লাঙলের পক্ষে কাজ করছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের পক্ষেও নগরীতে কাজ করছেন দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা। চরমোনাই পীর প্রতিষ্ঠিত আশপাশের মাদরাসাগুলোর হাজারো শিক্ষার্থী কাজ করছে হাতপাখার পক্ষে।

বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষেও দলে দলে কাজ করছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। নির্বাচনী প্রচারে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। এতে নির্বাচনের কয়েক দিন আর্থিকভাবে কিছুটা উপকৃত হয়েছেন তাঁরা।

এদিকে অনেকটা একাই নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির প্রয়াত সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপণ। বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ায় এবং রূপণকে বিএনপি আজীবন বহিষ্কার করায় প্রকাশ্যে তাঁর পক্ষে কাজ করতে পারছেন না তাঁর ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তবে গোপনে বিএনপির অনেকেই যোগাযোগ রাখছেন তাঁর সঙ্গে।

গতকাল দুপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বরিশালের মানুষ তাঁকে গ্রহণ করেছে। তাঁরা উপলব্ধি করেছে নৌকা জিতলে বরিশালের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব। খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, ‘নির্বাচিত হয়ে আমি বরিশালের মানুষের সেবা করতে চাই। আমি তাঁদের নেতা হতে চাই।’ বরিশাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নতুন বরিশাল গড়তে ১২ জুন নৌকায় ভোট চান তিনি।

জুমার নামাজের আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, আওয়ামী লীগ হাজার হাজার বহিরাগত বরিশাল নগরীতে জড়ো করেছে। তাঁরা ২০১৮ সালের মতো ভোট ডাকাতির পাঁয়তারা করছে। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছে। বহিরাগতদের মোটরসাইকেল মহড়া আর নৌকার পক্ষে সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার অপতৎপরতায় নগরবাসীর মাঝে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, ভোট নিয়ে মানুষের মাঝে শঙ্কা আছে। ইভিএমে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। ভোটের ফল ঘোষণার আগে শঙ্কামুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত দেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলবেন তিনি।

বিএনপির প্রয়াত মেয়রপুত্র কামরুল আহসান রূপণ গতকাল জুমার নামাজের আগে বলেন, শহরে একটা কথা ভেসে বেড়াচ্ছে ‘একটি গাছের তিনটি শাখা/নৌকা, লাঙল, হাতপাখা’। জনগণ আওয়াম লীগ এবং তাদের মিত্রদের প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির সমর্থক গোষ্ঠীসহ সরকারবিরোধী সর্বসাধারণের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।

অন্য তিন প্রার্থী যথাক্রমে জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার ও মো. আসাদুজ্জামানের নির্বাচনী পালে তেমন হাওয়া লাগেনি।

মেয়র প্রার্থী ছাড়াও বরিশাল সিটির ৩০ সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৯ এবং ১০ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৪২ জন। এবার ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। নারী ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ আর পুরুষ ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন। তাদের ভোট দেওয়ার জন্য নগরীর ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪টি বুথ প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রবেশপথে এবং বুথকক্ষে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা।

সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বিসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর