অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘটে রংপুরের সরকারি কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মিঞার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার অপসারণ দাবিতে শনিবার সকালে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে বাইরে লাগাতার কর্মবিরতি এবং অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ১৭৯ শিক্ষকের মধ্যে অধ্যক্ষ ছাড়া সবাই অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন। এ আন্দোলনে কলেজের ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীও যোগ দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে শনিবার থেকে ক্লাস বর্জন করেছে। অধ্যক্ষ তার বাসভবনে অবস্থান করছেন।
এদিকে গতকাল সকালে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মাহবুবুর রহমান কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে আন্দোলনের কারণ ও কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চান।
এ প্রসঙ্গে উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ডিজি আন্দোলনের কারণে কলেজের পরিস্থিতি জানতে চান। এ ছাড়া শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদককে আন্দোলনের কারণ লিখিতভাবে জানাতে বলেন। শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিখিত অভিযোগ ই-মেইলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ধর্মঘটে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, অধ্যক্ষকে অপসারণ না করা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।’
ধর্মঘটে অংশ নেওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন শিক্ষামন্ত্রীর ভায়রা অধ্যাপক আবদুল লতিফ মিঞা। যোগ দেওয়ার পর থেকে অধ্যক্ষ কলেজের সব সিদ্ধান্ত একাই নেন। উপাধ্যক্ষ ও কলেজ শিক্ষক পরিষদের মতামত আমলে নেন না। কথায় কথায় শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক ও নানাভাবে কটূক্তি করেন।
কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ একতরফা ক্ষমতার অপব্যবহার করে সব সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বৃহস্পতিবার সকালে কলেজে একটি সেমিনারে আমাকে নিয়ে অশালীন কটূক্তি করেন। নানা সময় অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদেরও কটূক্তি করেন। এ ঘটনায় ওইদিন বিকালে শিক্ষক পরিষদের সভা আহ্বান করা হয়। সভায় পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। সভায় তার কাছে অশালীন আচরণ ও শিক্ষক-কর্মচারীদের কটূক্তির কারণ জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উপাধ্যক্ষ ও আমাকেসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিলে সভা পণ্ড হয়ে যায়।
ওইদিন রাতেই অধ্যক্ষ সরকারি কাজে বাধা প্রদান, হুমকি-ধমকির মিথ্যা অভিযোগ তুলে কলেজের উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরীসহ ৯ শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং তার অপসারণ দাবিতে আমরা শনিবার সকালে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছি। আমাদের সঙ্গে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও যোগ দিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট চলবে।
কলেজের কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল বলেন, কিছুদিন পরে অবসরে যাব। দীর্ঘদিন ধরে এ কলেজে আছি। বর্তমান অধ্যক্ষের মতো আর কোনো অধ্যক্ষ কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেননি। অধ্যক্ষকে অপসারণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। কোনো কর্মচারী কাজে যোগ দেবে না। জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ মিঞা বলেন, ‘আগের অধ্যক্ষের সময় যারা সুবিধা নিয়েছেন। তারা আমার কাছে সুবিধা পাচ্ছেন না। এ ছাড়া আমাকে নিয়োগ দেওয়ার সময় উপাধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক এ পদে নিয়োগ চেয়েছিলেন। নিয়োগ না পাওয়ায় তিনি এসব করাচ্ছেন। উপাধ্যক্ষ এবং শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে কিছুসংখ্যক শিক্ষক আমাকে বিভিন্নভাবে নাজেহাল করেন এবং কাজে বাধা দেন। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছি। বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে।’ উপাধ্যক্ষ ও শিক্ষক পরিষদের সহসভাপতি অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘অনিয়ম ও অসদাচরণের বিষয় ঢাকতেই অধ্যক্ষ এসব বলছেন। আমার চাকরির মেয়াদ মাত্র চার মাস আছে, আমি কেন এসব করব।’