বুধবার, ২১ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপত্যে অনন্য ‘মেটি স্কুল’

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

দিনাজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপত্যে অনন্য ‘মেটি স্কুল’

দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের প্রকৃতিবান্ধব, ভিন্নধর্মী নির্মাণশৈলীতে নির্মিত ‘মেটি স্কুল’টি এখন বিশ্বজোড়া নাম। স্কুলটির ভিন্নধর্মী স্থাপত্যশিল্পের জন্য ২০০৭ সালে আগা খান আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে হলেও স্কুলটির কল্যাণে এখন দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে বিখ্যাত এই গ্রামটি। স্কুলটির নির্মাণশৈলী দেখার জন্য দিন দিন বাড়ছে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীসহ পর্যটকের সংখ্যা। শিক্ষার পাশাপাশি স্থাপত্যেও অনন্য এই মেটি স্কুল। দ্বিতল এ স্কুলের  বৈশিষ্ট্য হলো- কক্ষে শিক্ষার্থীরা গরম কি শীতের অনুভূতি তীব্রভাবে অনুভব করে না। আলো-বাতাসের আগমনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ঘরগুলোও পরিবেশবান্ধব। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার প্রত্যন্ত রুদ্রপুর গ্রামে এ স্কুলটি গড়ে তোলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দীপশিখা’। সংগঠনটির তৎকালীন দীপশিখার নির্বাহী পরিচালক  পৌল চারোয়া তিগ্যা ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ছোট্ট পরিসরে ‘মেটি স্কুল’ শুরু করেন। ‘মেটি’ একটি সংগঠনের নাম। যার পুরো নাম মডার্ন এডুকেশন   অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (মেটি)। কম খরচে এবং হাতের নাগালের উপকরণ ব্যবহার করে মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে মেটি। আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান, শিক্ষার প্রতি স্থায়ী ও ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি, যুক্তিযুক্ত চিন্তার বিকাশ ও দলীয়ভাবে শিক্ষাগ্রহণ এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মেটি স্কুলের যাত্রা। ২০০৫ সালে বিরল উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামে মেটির স্থাপত্য মাটির স্কুলঘর নির্মাণ শুরু হয় জার্মানির ‘শান্তি’ দাতা সংস্থার অনুদানে। জার্মান ও অস্ট্রিয়ার ১০ জন ছাত্র ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয় ১৯ জন শ্রমিক স্কুল নির্মাণে অবদান রাখেন। সহযোগিতা করেন দীপশিখা প্রকল্পের কর্মীরা। জার্মান আর্কিটেক্ট আন্না হেরিঙ্গার ও আইকে রোওয়ার্গ এর তত্ত্বাবধান করেন।

মেটি স্কুল নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বালু ও বাঁশ, দড়ি, খড়, কাঠ, টিন, রড, ইট ও সিমেন্ট। মাটি ও খড় মেশানো কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর দেয়াল। দেয়ালের ভিতের ওপর দেওয়া হয়েছে আর্দ্রতারোধক। দেয়ালের প্লাস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি ও বালু। মেঝের প্লাস্টারে পামওয়েল ও সাবানের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণভাবে ওয়াটারপ্রুফ। মেটি স্কুলের ৯ ফিট উচ্চতার ওপরে প্রথম তলায় ছাদ হিসেবে বাঁশ বিছিয়ে ও বাঁশের চাটাই দিয়ে মাটির আবরণ দেওয়া হয়েছে। দোতলার ছাদে বাঁশের সঙ্গে কাঠ দেওয়া হয়েছে। ওপরে বৃষ্টির পানির জন্য দেওয়া হয়েছে টিন। কোথাও ইট ব্যবহার করা না হলেও ঘরের ভিত হিসেবে ইট ব্যবহার করা হয়েছে।

দীপশিখার রুদ্রপুর প্রকল্প অফিসের এরিয়া ম্যানেজার সেপাল চো. দেবশর্মা জানান, ২০০৭ সালে বিশ্বের ১৩টি স্থাপত্যের সঙ্গে মেটি স্কুলকে আগা খান অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়। পুরস্কার হিসেবে দীপশিখাকে ১৩ হাজার ৭০০ মার্কিন ডলার, আর্কিটেক্ট আন্না হেরিঙ্গারকে ১৬ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ও আর্কিটেক্ট আইকে রোজওয়ার্গকে ৮ হাজার ২০০ ডলার দেওয়া হয়।

এখানে ছাত্রছাত্রীদের নাচ-গান-অভিনয়-চিত্রাঙ্কন, দলীয় আলোচনা ও কথোপকথনভিত্তিক ইংরেজি শেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে। বর্তমানে এই স্কুলে শিশু শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর