শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

অবশেষে খুলছে সিলেট-ঢাকা ছয় লেন প্রকল্পের জট

যোগাযোগ ও শিল্পায়নে নতুন সম্ভাবনা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক চার লেন প্রকল্প বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। মূল চার লেন সড়কের পাশে ছোট যানবাহনের জন্য হবে আরও দুটি সার্ভিস লেন। ছয় লেনের এ মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নকে ঘিরে নানা জটিলতা দেখা দেওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে ছিল প্রকল্পটি। তবে প্রকল্পের পেছনে লেগে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আবদুল মোমেন। তার প্রচেষ্টায় অবশেষে এ প্রকল্পের জট খুলতে শুরু করেছে। এ প্রকল্পের জন্য অর্থ ছাড়ের বিষয়টি অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেটের যোগাযোগ, ব্যবসা, শিল্পায়ন ও পর্যটন খাতে দিনবদলের হাওয়া বইবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট। এ মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গেও যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে অর্থায়ন জটিলতায় বার বার ব্যাহত হয় প্রকল্পের অগ্রগতি।

জানা গেছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে চীনা অর্থায়নের কথা ছিল প্রথমে। এ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঢাকা সফরের সময় উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত হয়। চীনা সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে দায়িত্ব         দেয়। তবে প্রক্রিয়াকরণে বিলম্বসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ২০১৮ সালের ২৯ মে চিঠি দিয়ে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) জানায়, প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নেই বাস্তবায়ন হবে। এরপর ওই বছরের ২৯ জুলাই চীনা অর্থায়ন প্রক্রিয়া বাতিল করতে চীনা দূতাবাসকে চিঠি দেয় ইআরডি। এর পরও পরিকল্পনা কমিশন এবং সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান করতে ইআরডিকে অনুরোধ জানায়। শেষ পর্যন্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে রাজি হয়। এ প্রকল্পে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। জানা গেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করার কথা বলেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি এ প্রকল্পের অগ্রগতিতে জোর দেন। তার প্রচেষ্টায় এডিবি প্রকল্পে অর্থায়নে রাজি হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এডিবির টিম লিডার (বহিঃসম্পর্ক বিভাগ) গোবিন্দ বার প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। সর্বশেষ গতকাল সিলেট-ঢাকা ছয় লেন প্রকল্পে অর্থ ছাড় দিতে এডিবি অনুমোদন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি জানান, অনেক জটিলতার পর অবশেষে এডিবি সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে অর্থ ছাড় অনুমোদন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হলে সিলেটের যোগাযোগ ও শিল্প খাতে প্রভূত উন্নতি সাধন হবে। সিলেটের সঙ্গে ঢাকার যাতায়াতে সময় কমবে, ফলে উদ্যোক্তারা সিলেট অঞ্চলে শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় আরও আগ্রহী হবেন। এ ছাড়া সিলেটের পর্যটনেও নতুন গতি আসবে বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল জব্বার জলিল বলেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত হলে এ অঞ্চলের শিল্পায়ন ও ব্যবসা খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ মহাসড়ক দিয়ে ভারতের সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে বাণিজ্য আরও জোরদার করতে পারবে বাংলাদেশ। তা ছাড়া যাতায়াতে কম সময় লাগায় সিলেটে পর্যটকের উপস্থিতিও বাড়বে উল্লেখযোগ্য হারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর