শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেনাপোল বন্দরে তিন মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৮০০ কোটি টাকা

বন্দর-কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বয়ের অভাব

বেনাপোল প্রতিনিধি

দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। এ বন্দরের রাজস্ব ঘাটতি দিন দিন বেড়েই চলছে। ভারতের পেট্রাপোলের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বন্দর-কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক কর্মকতাদের সমন্বয়ের অভাবে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেন বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে সপ্তাহে ২৪ ঘণ্টা বাণিজ্যসেবা। এতে সরকারের যেমন রাজস্ব আয়ে ভাটা পড়েছে, তেমনি লোকসান গুনছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী আমদানি করা পণ্যের শুল্ক ফাঁকি দিতে না পেরে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের নামে বিভিন্ন জায়গায় বেনামি অভিযোগ দিয়ে তাকে হয়রানি করছেন। এ কারণে এই বন্দর দিয়ে আমদানিকারকরা হয়রানির ভয়ে পণ্য আমদানি করছেন না। বেনাপোল কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল              ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এ সময় ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ২০ পর্যন্ত গত প্রায় ৩ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার কোটি টাকা। এক্ষেত্রে আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ঘাটতি থাকে ৮০০ কোটি টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা বলেন, সব বন্দরে আমদানিপণ্যের ওপর রাজস্ব পরিশোধের নিয়ম এক হতে হবে। বন্দরের ধারণক্ষমতা ৩৮ হাজার মে. টন, কিন্তু এখানে সব সময় পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মে. টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় সুবিধা পেলে এ বন্দর থেকে দ্বিগুণ রাজস্ব পাবে সরকার।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের জয়েন্ট কমিশনার শহীদুল ইসলাম জানান, পণ্য চালান খালাসে আগের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে কাস্টমসে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য চালান কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। তবে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা পূরণের। শুল্ক ফাঁকির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তারা আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) প্রদোষ কান্তি দাস জানান, বাণিজ্যে গতিশীলতা ফেরাতে ইতিমধ্যে স্বল্প পরিসরে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় কাজ শুরু হয়েছে। সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আরও কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া আরও কিছু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এসব কাজ সম্পন্ন হলে বেনাপোল বন্দরে বাণিজ্যে আরও গতিশীলতা বাড়বে বলে জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর