শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে প্রতারক চক্র

মাহবুব মমতাজী

কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে প্রতারণার জালে আটকা পড়েন ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রেজাউল হাসান। মাস্টার্স শেষ করে বিদেশি কোম্পানিতে অফিসার হিসেবে চাকরি নিয়ে সৌদি আরব চলে যান। সেখানে ১২ বছর চাকরি করার পর ২০০৭ সালে দেশে ফেরেন। এরপর ২০০৮ সালে বিয়ে করেন। দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই চলছিল রেজাউলের সংসার। ২০১১ সালে প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের সদস্য শম্পা রানী দাস নামে এক নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। প্রতি লাখে মাসে ৩ হাজার টাকার মুনাফার প্রলোভনে নিজের দীর্ঘ প্রবাস জীবনের কষ্টার্জিত জমানো ৪৭ লাখ ও আপন বোনের কাছ থেকে আরও ২৩ লাখসহ মোট ৭০ লাখ টাকা জমা রাখেন ওই কোম্পানিতে। এই কোম্পানিই তার জীবনে ঝড় বয়ে নিয়ে আসে। মুনাফার টাকা তো দূরের কথা, কোম্পানির কর্মকর্তাদের পেছনে দীর্ঘদিন ঘুরেও জমা রাখা আসল টাকা ফেরত পাননি রেজাউল। টাকা ফেরত পেতে যখন তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন তখন নিজের বোনের করা চেক জালিয়াতির মামলায় ছয় মাসের জেল হয় তার। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার হন তিনি। ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে ওই বছরের ১৪ জুলাই মারা যান তিনি। এ বছরের ৯ জানুয়ারি ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় দুদকের একটি মামলাসহ ১৮ মামলার পলাতক আসামি প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ লিমিটেডের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রাজুকে যশোর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির ও ভুক্তভোগী রেজাউলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

রেজাউল হাসানের স্ত্রী শাহিদা শারমীন জানান, তার স্বামী সারা জীবন যা উপার্জন করেছিলেন সব ওই মাল্টিপারপাস কোম্পানি আত্মসাৎ করেছে। স্বামীকে হারানোর পর দুই ছেলেকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার। তার বড় ছেলে পঞ্চম শেণিতে আর ছোট ছেলে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। টিউশনি এবং স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করেন তিনি।

  সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন জানান, গ্রেফতার রাজু ও তার অন্যতম সহযোগী শম্পা রানী দাস ১০ বছর রূপালী নামের একটি মাল্টিপারপাস কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরে ২০১০ সালে নিজেরাই প্রাইম মাল্টিপারপাস গড়ে তোলেন। প্রতারণার মাধ্যমে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দুদকের মামলায় সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ২ হাজার ৫০০ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সালে প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে যশোর, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও মাগুরায় ২০টির মতো শাখা চালু করা হয়। গ্রেফতারের পর রাজুকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সিআইডির অনুসন্ধানে ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি দুটি বসতবাড়ি, দুটি কাভার্ডভ্যানসহ ১০ বিঘা জমির খোঁজ পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের নামে দুটি গাড়ি ও ছয়টি স্থানে জমির সন্ধান পায় সিআইডি।

তদন্তে তারা জানতে পারে, এই চক্রের অন্যতম সদস্য শম্পা রানী দাস ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়ে কিছু দিন জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন। এ ছাড়াও এই প্রতারক চক্রের অন্য সহযোগীরা বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় নিবন্ধন নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সিআইডি তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর