শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

১৩ পয়েন্টে জমজমাট মাদকের কারবার

রাজশাহী পুলিশের তালিকায় শতাধিক নাম

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে রাজশাহীর রাস্তায় জনসমাগম ঠেকাতেই ব্যস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর এ সুযোগে শুরু হয়েছে রমরমা মাদকের কারবার। খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িতে বাড়িতে বসছে মাদকের আসর। সেদিকে নজর দেওয়ার সময় খুব কমই পাচ্ছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে সহজ স্বীকারোক্তি এসেছে পুলিশের পক্ষ থেকেও। জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। এ কারণে মাদকবিরোধী অভিযান কিছুটা কমে এসেছে।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হবে বলেও জানান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদক জোন হিসেবে পরিচিত রাজশাহী নগরীর গুড়িপাড়ায় এখনো রমরমা মাদক ব্যবসা। মাদক সেবনে নগরীর বিভিন্ন এলাকার লোকজনের আনাগোনা আছে এলাকাটিতে। এখানে এখন হেরোইন ও ইয়াবার ব্যবসা জমজমাট। আর নগরীর তালাইমারী থেকে পূর্বে চারঘাট উপজেলার টাঙন এলাকায় চলছে ফেনসিডিলের ব্যবসা। কিছু এলাকায় বিক্রি হচ্ছে হেরোইন, ইয়াবা এবং গাঁজাও। তবে ফেনসিডিলই সবচেয়ে বেশি। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে রাজশাহীতে মোটরসাইকেলে একাধিক ব্যক্তির আরোহী হওয়া নিষিদ্ধ থাকলেও পদ্মা নদীর পাড়জুড়ে এর কোনো বালাই নেই। সেখানে মোটরসাইকেল দাপিয়ে একসঙ্গে মাদক সেবনে যাচ্ছেন দুই থেকে তিনজন করে যুবক। এরা ফেনসিডিল ও ইয়াবায় আসক্ত। যেখানে দাম একটু কম পান, সেখানেই মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটে যান তারা। পকেট খালি করে নেশায় বুঁদ হয়ে আবার ঘরে ফেরেন। পথে কখনো কখনো ঘটে দুর্ঘটনা। এদিকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক সংগ্রহে ঠিকই বের হচ্ছেন। সীমান্ত পেরিয়ে মাদক আসার পর যেসব বাড়িতে থাকে, সেখান থেকে কিনে আনছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এ কাজে এখন নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বেশি। এ রকম তিন নারীকে অবশ্য বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনের সামনে থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন নগরীর বোয়ালিয়া থানার পাঠানপাড়া এলাকার সোহেল রানার স্ত্রী রেশমা খাতুন (২২), ডিঙ্গাডোবা এলাকার লিটন আলীর স্ত্রী কাজল রেখা (২২) ও কাশিয়াডাঙ্গা থানার বসড়ি এলাকার খুরশেদ আলমের মেয়ে রেশমা খাতুন (২০)। তারা রিকশায় চড়ে যাচ্ছিলেন। পুলিশ এদের কাছ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সকাল-বিকাল নগরীর বোয়ালিয়া থানার তালাইমারী শহীদ মিনারেই বসে থাকে কিছু উঠতি বয়সী ছেলেরা। তাদের কাছে হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজা সবই থাকে। টাকা দিলেই এসব মাদকের পুরিয়া পকেট থেকে বের করে দেয় তারা। চাইলে ফেনসিডিলও এনে দেয় তারা। এলাকার ইদ্রিস, লিলি, পলি, রহি ও কমেলার মাদক বিক্রি করে তারা। এদের মধ্যে কমেলা ওই এলাকার সবচেয়ে বড় খুচরা মাদক ব্যবসায়ী। অভিযোগ আছে, পুলিশকে মাসোহারা দিয়েই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এই নারী।

এদিকে নগরীর পদ্মা নদীর পাড় মহব্বতের ঘাট এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন শিমুল, পিন্টু, জব্বারসহ সাত-আটজন। ডাসমারি স্কুল মোড়ে মাদক ব্যবসা থেমে নেই জাকা, পালা, জামাল ও রফিকের। বটতলা এলাকায় মাদক বিক্রি করছেন চর জিয়াসহ ১০-১২ জন। মিজানের মোড়ে সক্রিয় মনিরুল, আসলাম, কাদো, চম্পা, রুমা, রুনা, রবিউল, ইয়াসিন, মিলন, মিঠু, আকাশ, ইয়াসিনসহ আরও অনেকেই। কাটাখালী থানার শ্যামপুর বালুঘাট এলাকায় বেপরোয়া তারেক। দাপটের সঙ্গে মাদকের ব্যবসা চালাচ্ছেন জাহাজঘাট এলাকার সজীব ও জাব্বার। আর চারঘাটের টাঙন পূর্বপাড়া, মধ্যপাড়া ও পশ্চিমপাড়া এলাকায় মাদকের নিয়ন্ত্রণ হানিফ, সাজ্জাদ, মিলন, কালু, চায়না, আফরোজ, তজিবার, লিটন, রফিক, রিংকু, রেজাউল, হাসান, রায়হান, শুকটা, রাজীব, সজীব, আলীরাজ, হারান, পরান, নাজির, আলিম, কালোনি, এবাদুল, আসাদুল, ফারুক, মাইনুল, আরজুল, উজির, কালাম, জসিম, বাহালুল, লুৎফর, আকাশ কটা, হালিম ও সজলের হাতে। এরা প্রত্যেকেই একাধিক মামলার আসামি। গ্রেফতার হন, জামিন পান, আবার জড়িয়ে পড়েন মাদকের কারবারে। গ্রেফতার এড়াতে পুলিশকে মাসোহারাও দেন কেউ কেউ। করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেই ভারত থেকে হেরোইনের বড় বড় চালান আসছে জেলার গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে। গোদাগাড়ী পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের মহিষালবাড়ী, মাদারপুর মহল্লায় অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদকের কেনাবেচা চলে। কিছুদিন যারা আত্মগোপনে ছিল তারা আবার ফিরেছে এলাকায়। তারা কোটি কোটি টাকার হেরোইন আনছে সীমান্ত পার করে। পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোফাজ্জল হোসেন মোফা বলেন, দিয়াড়মানিক চকের বাসিন্দা শরিফুল মেম্বার। মহিষালবাড়ীতে বাড়ি করেছেন। বড় মাপের মাদক ব্যবসায়ী। তিনি প্রকাশ্যে। এ রকম চর থেকে আসা অনেকেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন তারা গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও আবার এলাকায় এসেছে। এখন লোক সেট করে তারা মাদক পাচার করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদারপুরের তোফাজ্জল, ইসহাক ল্যাংড়া, আহম্মদ, তারেক, মাসুম, ধুলু, কালু, মানিকচকের মাহবুব কানা, ফুলাল, তালতলা এলাকার আরিফ, পিয়ারুলসহ আরও অনেকেই বড় মাদক ব্যবসায়ী। করোনাভাইরাসের কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যস্ততার সুযোগে তাদের কারবার জমজমাট। রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই এখন করোনা ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। আমরাও সেই চেষ্টাটা করে যাচ্ছি। ফলে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ হচ্ছে কম। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর