বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনাভাইরাস

হুমকিতে জাহাজভাঙা শিল্প

জ্যামিতিক হারে কমছে স্ক্র্যাপ লোহার দাম ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

হুমকিতে জাহাজভাঙা শিল্প

হুমকির মুখে পড়েছে দেশের একমাত্র জাহাজভাঙা শিল্প। করোনা সংক্রমণের কারণে একদিকে বন্ধ জাহাজভাঙা অপরদিকে জ্যামিতিক হারে কমছে স্ক্র্যাপ লোহার দাম। তার ওপর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, ব্যাংক সুদসহ অন্যান্য খাতে প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। দেশের সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে ১৫ দিনে শিপইয়ার্ড ব্যবসায়ীদের লোকসান হয়েছে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে তাদের লোকসান হতে পারে হাজার কোটি টাকা বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জাহাজভাঙা শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা লোকমান হোসেন বলেন, বর্তমানে এ শিল্পের অবস্থা খুবই নাজুক। প্রায় ইয়ার্ড মালিকের কাছে প্রচুর স্ক্র্যাপ মজুদ রয়েছে। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে ইয়ার্ড মালিকদের। লালবাগ শিপব্রেকার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম আবদুল্লাহ বলেন, জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেউলিয়া হতে হবে এ খাতের সংশ্লিষ্টদের। এজন্য সরকারের কাছে ব্যাংক সুদ, ট্যাক্স ও অন্যান্য খাতের সরকারি খরচগুলো সাময়িকভাবে মওকুফের দাবি জানান তিনি। জানা যায়, দেশের একমাত্র জাহাজভাঙা শিল্পে বর্তমানে ৬০টির মতো শিপব্রেকিং ইয়ার্ড চালু রয়েছে। যেখানে ভাঙার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে অর্ধশতাধিক জাহাজ। এ ছাড়া বহির্নোঙরে অবস্থান করছে আরও কমপক্ষে ২০টি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সবুজ সংকেত পেলে জাহাজগুলো ভাঙার জন্য ইয়ার্ডে নোঙর করবে। এত দিন জাহাজভাঙা শিল্পের কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে কার্যত বন্ধ ইয়ার্ডগুলো। তবে জাহাজভাঙা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শ্রমিক-কর্মচারী এবং ইয়ার্ড সংশ্লিষ্টদের এলাকায় অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন ব্যবসায়ী। তাই তাদের থাকা-খাওয়ার জোগানের পাশাপাশি বেতনও দিচ্ছেন ইয়ার্ড মালিকরা। সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ব্যাংক সুদসহ অন্যান্য খাতে টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে ইয়ার্ড মালিকদের। তাই চলমান ছুটিতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ক্ষতির পরিমাণ দ্রæতই কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। কয়েকজন ব্যবসায়ীর দাবি- সাধারণ ছুটির আগে জাহাজ কেনা, ভাঙা থেকে শুরু করে সব মিলিয়ে প্রতি টন স্ক্র্যাপে খরচ পড়েছে প্রায় ৪৩ হাজার টাকা। কিন্তু সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর হঠাৎ কমতে থাকে স্ক্র্যাপ লোহার দাম। বর্তমানে প্রতি টন স্ক্র্যাপ লোহা বিক্রি হচ্ছে ৩৭ হাজার টাকা। এতে প্রতি টন লোহায় লোকসান গুনতে হচ্ছে কমপক্ষে ৬ হাজার টাকা। এ ছাড়া বর্তমানে স্ক্র্যাপ লোহা বেচা-কেনা এক প্রকার বন্ধ রয়েছে। তাই ৬০ ইয়ার্ড মালিকের কাছে অবিক্রীত রয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ টন স্ক্র্যাপ লোহা। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে অচিরেই পথে বসতে হবে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬০ ব্যবসায়ীকে। দেশের ইস্পাত শিল্পের জোগান আসে সীতাকুন্ডের জাহাজভাঙা শিল্প এলাকা থেকে। এ ছাড়া আবাসনসহ কয়েকটি বড় খাত নির্ভরশীল এ শিল্পের ওপর। তাই জাহাজভাঙা শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে অন্যান্য খাতেও।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর