শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

লাপাত্তা আকবরের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদের মৃত্যুর ১৬ দিন পার হয়েছে। ঘটনার পরদিন থেকে লাপাত্তা প্রধান অভিযুক্ত ফাঁড়ির ইনচার্জ সাময়িক বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া। কেউ বলছেন দেশের ভিতরই গা ঢাকা দিয়ে আছেন, কেউ বলছেন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন আকবর। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করেও আকবরের অবস্থান শনাক্ত করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চতুর আকবরের অবস্থান শনাক্ত করে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই। ১১ অক্টোবর রায়হানের মৃত্যুর পরও আকবর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে দায়িত্বরত ছিলেন। পরদিন বিকালের দিকে তাকেসহ ফাঁড়ির চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন সদস্যকে প্রত্যাহারের পর গা ঢাকা দেন তিনি।

পালানোর সময় ব্যক্তিগত ও সরকারি মোবাইল ফোন রেখে যান। এর পর থেকে আর কেউ খোঁজ পাননি এসআই আকবরের।গা ঢাকা দেওয়ার পর আকবর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন ওঠে। কারও ধারণা আকবর সিলেটের ভোলাগঞ্জ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত গেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সহযোগিতা নিয়েছেন দুই দেশের চোরাকারবারিদের। আবার কেউ কেউ বলছেন, আকবর পালিয়েছেন আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হওয়ায় পালানোর জন্য আখাউড়া সীমান্তই বেছে নিয়েছেন। তবে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য বা প্রমাণ নেই কারও কাছে।

২০ অক্টোবর রায়হানের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রধান অভিযুক্ত আকবরকে দ্রুত গ্রেফতারের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ওই দিন তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তার ধারণা আকবর দেশেই আছেন। তবে দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও তিনি রক্ষা পাবেন না। সিলেটে শিশু রাজন হত্যা মামলার প্রধান আসামি কামরুলকে যেভাবে বিদেশ থেকে ধরে আনা হয়েছিল সেভাবে তাকেও আনা হবে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আকবরের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আকবর পুলিশ বাহিনীর সদস্য হওয়ায় তিনি অন্য যে কোনো অপরাধীদের চেয়ে সহজে আত্মগোপন করতে পারছেন। কারণ তিনি জানেন তার অবস্থান শনাক্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কী কী ধরনের প্রযুক্তি ও পন্থা অবলম্বন করতে পারেন।’

এদিকে, হত্যাকান্ডের ১৬ দিন পরও আকবর গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিহত রায়হানের পরিবারের সদস্যরা। গত রবিবার বন্দরবাজার ফাঁড়ির সামনে অনশনরত অবস্থায় রায়হানের মা সালমা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরপরই আকবরকে গ্রেফতার করা হলে সে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেত না। সময় ক্ষেপণ করে পুলিশই তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এখন বলা হচ্ছে আকবরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘আকবর পুলিশের কাছে থাকুক আর অন্য কোথাও থাকুক তাকে গ্রেফতার করতে হবে। তাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমার পরিবার নিরাপত্তাহীন।’

এদিকে, এসআই আকবরকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এসআই আকবর কোথায় আছেন তা এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তার অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতারে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

প্রসঙ্গত, ১০ অক্টোবর রাতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় মহানগরের নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে। পরদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে গুরুতর অবস্থায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। প্রথমে ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হান মারা গেছেন বলে দাবি করে পুলিশ। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ফাঁড়িতে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পেয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন সদস্যকে প্রত্যাহার করে। রায়হানের স্ত্রীও হত্যা এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে থানায় মামলা করেন।

সর্বশেষ খবর