শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ

করোনার মধ্যেও প্রণোদনার মাধ্যমে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা হয়েছে : বাণিজ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ

করোনায় কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখাই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এজন্য ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোক্তাসহ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে প্যাকেজের সুবিধা নিতে পারেন সেজন্য সরকারকে মনিটরিং বাড়াতে হবে। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আয়োজিত ‘কভিড-১৯ মোকাবিলা এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজ’ বিষয়ে সিরিজ মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও বিশেষ অতিথি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তারা করোনাকালীন পরিস্থিতিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন। পাশাপাশি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় প্রয়োজনে নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানান। প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্সি মিয়াং টেমবোন, বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে করোনাকালে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনায় করোনাভাইরাসে দেশে ক্ষয়-ক্ষতি কম হয়েছে। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে।

তিনি বলেন, এসএমই খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও সে প্রণোদনা অর্ধেকের কাছে পৌঁছেনি। এদিকে নজর দেওয়া দরকার। ব্যাংকগুলো বড় গ্রাহকের স্বার্থ দেখছে। কিন্তু  ছোটদের দিকে খেয়াল দিচ্ছে না। কারণ এখানে ব্যাংকের মুনাফা কম। মনে রাখতে হবে শুধু মুনাফা নয়, দেশের দিকেও তাকাতে হবে।

মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে  যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে সরকার দ্বিধাহীন। জনগণের জীবন বাঁচানোর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি সিদ্ধান্ত কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, তা সার্বক্ষণিক মনিটর করছেন তিনি।

মুখ্য সচিব বলেন, অর্থনীতি সচল রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন, সেটা যে যথার্থ ছিল, এখন অনেকেই অনুধাবন করছেন। সেকেন্ড ওয়েভের সম্ভাব্য ধাক্কা সামলাতেও একই ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার বিষয়ে সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে মন্তব্য করে মুখ্য সচিব বলেন, ভ্যাকসিন বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গে যাতে তা বাংলাদেশ পায়, সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান আছে।

বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্সি মিয়াং টেমবোন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে দুটি দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। প্রথমত, শ্রমিকদের সহায়তা করতে হবে। বিশেষ করে পোশাক খাতের শ্রমিকসহ দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের সব ধরনের সহায়তার আওতায় আনতে হবে। এতে তাদের কর্মসংস্থান টিকে থাকবে। দ্বিতীয় হচ্ছে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে হবে।

জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, জাপান সব সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা দিয়ে আসছে। চলতি অর্থবছরেই জাপান প্রথমবারের মতো বাজেট সহায়তা দিয়েছে। করোনাকালেও নানা ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে।

বিজিএমইর প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক বলেন, আরও একটি করোনা ধাক্কা এগিয়ে আসছে। এ নিয়ে শঙ্কিত তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। ইতিমধ্যে ইউএসএতে পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ, জার্মানে ১০ শতাংশ, জাপানে ২৮ শতাংশ, ইতালিতে ৩০ শতাংশ, কানাডায় ৩০ শতাংশ, স্পেনে ৬ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। এর আগে  পোশাকের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক অর্ডার বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আগামী ৫ বছরের জন্য স্বল্প সুদে প্যাকেজের আওতায় ঋণ দরকার।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, প্যাকেজ ঘোষণার পর ৪ শতাংশ ফার্ম পুনরুদ্ধার হয়েছে, ২৯ শতাংশ হতে পারেনি। তাই ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের দিকে নজর দিতে হবে।

বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। তাদের সহায়তা দিতে হবে। বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে হবে।

সিরিজ মতবিনিময় সভার প্রথম দিনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখা এবং অর্থনীতির সামগ্রিক চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা’। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি বলেন, কভিড-১৯ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের অর্থনীতি। ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রয়েছে। সরকারের প্রচেষ্টায় মানুষ সচেতন হচ্ছে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর