বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা
টু ক রো খ ব র

এক মনিটরেই দেশের ৯৬ থানা

মাহবুব মমতাজী

ঢাকা রেঞ্জের ৯৬টি থানাকে এক মনিটরের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে ১৩টি জেলার ওইসব থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ, হাজতখানা ও সেন্ট্রিবক্সে। এর মাধ্যমে ঢাকা বিভাগের ২০ হাজার ৫০৯ বর্গকিলোমিটারের তথ্য মনিটরিং হচ্ছে একটি কন্ট্রোল রুম থেকেই। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এই তিনটি স্থানকে ঘিরেই আবর্তিত হয় থানার মূল কার্যক্রম। আর অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং দায়িত্বে অবহেলাসহ দীর্ঘদিন ধরে নানা অভিযোগ এসব স্থানকে কেন্দ্র করেই। গত বছর ২ ডিসেম্বর থেকে ২৮৮টি ক্যামেরায় থানাগুলোকে এই মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। আর রিমোট মনিটরিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের জন্য রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে বসানো হয়েছে অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার। এ সেন্টার থেকে উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করা হচ্ছে থানাগুলোকে।

থানার ডিউটি অফিসার, হাজতখানা ও সেন্ট্রিবক্সে বসানো আছে নাইট ভিশন মাল্টিকালার আইপি ক্যামেরা। সেখান থেকেই ক্যামেরা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে আশপাশের দৃশ্যও দেখতে পাচ্ছে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়।

পাশাপাশি ডিউটি অফিসারের টেবিলে রাখা হচ্ছে চকলেট। সেবা নিতে আসা প্রত্যেকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটি করে চকলেট। থানা মনিটরিংয়ে বাংলাদেশে এ ধরনের সিস্টেম এটাই প্রথম। একেবারে নতুন এ প্রযুক্তিতে চমক এসেছে পুলিশে। সিস্টেমের মাধ্যমে ধরা পড়া অনিয়মের ভিত্তিতে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্তত ৫০০টি অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকা রেঞ্জের সফলতার ভিত্তিতে দেশের অন্য থানাগুলোতেও এ পদ্ধতি চালু হবে।

ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে বসানো অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, যখনই কোনো থানার কার্যক্রমে অসঙ্গতি চোখে পড়ছে তখনই তার স্ক্রিনশট নিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ক্যামেরার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য ও সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে লাইভ কথা বলছেন সেন্টারের কর্মকর্তারা। সেন্টারে কর্মরত কর্মকর্তারা কথা বলার পাশাপাশি থানার লাইভ ভিডিও দেখতে পেলেও থানার পুলিশ সদস্যরা কোনো ভিডিও ফুটেজ দেখতে পান না। তাই কোনো অসামঞ্জস্য দেখে যখন রেঞ্জ অফিস থেকে মাইকে কথা বলা হচ্ছে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই চমকে উঠছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা। প্রাথমিকভাবে অনেকেই বুঝতে পারেন না কোথা থেকে আওয়াজ আসছে। কোনো কোনো পুলিশ সদস্য মনে করছেন, তার পাশে থাকা ওয়ারলেস সেট থেকেই বুঝি কথা বলা হচ্ছে। তখন ওই পুলিশ সদস্যকে বলা হয়, ‘আপনি সিসি ক্যামেরার দিকে তাকান। আমি রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় থেকে বলছি।’ তখন আকস্মিক পরিস্থিতি সামলে ওই পুলিশ সদস্য বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

এ বিষয়ে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমান আইজিপির ভিশন অনুযায়ী পুলিশই হবে জনগণের প্রথম ভরসার স্থল। তার পাঁচটি মূলনীতির মধ্যে তিনটি হলো- দুর্নীতিমুক্ত পুলিশি সেবা, নিপীড়ন ও হয়রানিমুক্ত পুলিশি সেবা এবং পুলিশের বৃহত্তর কল্যাণ, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি বাস্তবায়ন। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি এড়াতে এবং পুলিশি সেবা সহজলভ্য করতে অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এই মনিটরিং সেন্টারে প্রত্যেক থানার ৩০ দিনের ভিডিও রেকর্ড সংরক্ষিত থাকবে। আর পুলিশের সেবাদানের মূল কেন্দ্র হলো থানা। তাই পুলিশের সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই।

সূত্র জানায়, গত বছর ১৭ ডিসেম্বর শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে দীর্ঘ সময় কোনো পুলিশ সদস্য দায়িত্বে ছিলেন না। চেয়ার ছিল ফাঁকা। টেবিলে কিছু জিনিসপত্র ছিল। এ দৃশ্যটি ওই দিন বেলা ১২টা ৬ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে স্ক্রিনশট নিয়ে রেখে দেয় অপারেশন্স কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার। ২১ ডিসেম্বর দীর্ঘ সময় ফাঁকা ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষ। ওই দিন বেলা ১২টা ৪১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে এ-সংক্রান্ত একটি স্ক্রিনশট নেওয়া হয়।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নুরে আলম মিনা বলেন, সেবাপ্রত্যাশীদের জন্য ডিউটি অফিসারের কক্ষে চকলেট, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর লেখা কার্ড এবং জিডির ফরম আছে কি না তা নতুন সিস্টেমে ভালোভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। সেবাপ্রার্থীরা কত সময় থানায় বসে আছেন, সেবাপ্রার্থীদের প্রতি ডিউটি অফিসারের সাড়া কেমন, যথাযথ ড্রেসরুল অনুযায়ী অফিসার-ফোর্স-সেন্ট্রি ইউনিফর্মে আছেন কি না, ডিউটি অফিসারের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে কি না ইত্যাদি বিষয় মনিটরিং করা হচ্ছে কন্ট্রোল রুম থেকে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর