শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
বসুন্ধরার খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

দুই হাত তুলে দোয়া করলেন বৃদ্ধা শামছুন্নাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই হাত তুলে দোয়া করলেন বৃদ্ধা শামছুন্নাহার

বাড়ি বাড়ি ফেরি করে মাছ বিক্রি করেন বৃদ্ধা শামছুন্নাহার। করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় শামছুন্নাহারের মাছের ব্যবসাও ভালো যাচ্ছিল না। পাশাপাশি বয়স হয়ে যাওয়ায় আগের মতো বেশি বাড়ি বাড়ি ঘুরতেও পারেন না। খেয়ে না খেয়ে চলছিল দিন। গতকাল বসুন্ধরার ত্রাণ হাতে পেয়ে এই বৃদ্ধার চোখ ভিজে যায় আনন্দঅশ্রুতে। তখনো তিনি যানেন না কারা দিচ্ছেন এই সহায়তা। দুই হাত তুলে বলেন, যারাই এই গরিবের খাবারের ব্যবস্থা করল, আল্লাহ তুমি তাদের ভালো করো। শুধু শামছুন্নাহার নন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় গতকাল দেশের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয় অসহায়, কর্মহীন আরও অনেকের হাতে। খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয় সিলেট, পাবনা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার মানুষের মধ্যে। সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয় চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণ, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা ও মাস্ক। গত বছর দেশে করোনার তাণ্ডব শুরুর পর থেকেই দেশব্যাপী অসহায় ও কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করে আসছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশে দেড় বছর পরও একইভাবে অব্যাহত রয়েছে শিল্প গ্রুপটির ত্রাণ কার্যক্রম। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, সিলেট, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পাবনা, কক্সবাজার, যশোর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। সিলেট থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, তিন কুলে কেউ  নেই পঞ্চাশোর্ধ্ব আজিজ মিয়ার। ২০ বছর ধরে সিলেট নগরীর নিত্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার কালিঘাটে গাড়িতে পণ্য তোলার কাজ করেন তিনি। নিজের কষ্টার্জিত উপার্জনে স্বাচ্ছন্দ্যেই চলছিল স্ত্রী, তিন সন্তান আর মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার। কিন্তু মহামারী করোনা তার সংসারে বসিয়েছে কালো থাবা। সারা দিন কর্মব্যস্ত আজিজ মিয়া এখন পুরোদস্তুর বেকার। মহামারীর কারণে কালিঘাটের আগের ব্যস্ততা আর নেই। কাজের চেয়ে শ্রমিক বেশি। অনেকটা  খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে আজিজ মিয়ার। গতকাল এই আজিজ মিয়ার হাতে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয় খাদ্য উপহার। উপহারের প্যাকেট কাঁধে তুলে নেওয়ার পর আজিজ মিয়ার চোখ যেন জলে ছলছল। সেই জল স্বস্তির, কৃতজ্ঞতার। জানালেন, এক সপ্তাহ ধরে বাসায় তিনবেলা চুলা জ্বলে না। কাজ না থাকায় ধারদেনা করে এতদিন চলেছি। এখন কেউ ধার দিতে চায় না। বসুন্ধরার এই সহায়তায় বেশ কয়েকদিন চলে যাবে। আল্লাহ বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক ও এর সঙ্গে জড়িত সবার ভালো করুন। শুধু আজিজ মিয়া নয়, করোনার কারণে সংকটে থাকা কালিঘাটের ১ হাজার ৬০০ শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য উপহার। সিলেট নগরীর কালিঘাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শ্রমিকদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেড এবং বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের এরিয়া সেলস ম্যানেজার মো. একরামুল হাসান,  মো. রাব্বি হাসান টিটু, কালিঘাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিন ব্রাদার্সের পরিচালক মাসুদুর রহমান মাসুদ, মাহের ব্রাদার্সের পরিচালক মীর তাহের হোসেন এবং মেসার্স সোনালী স্টোরের পরিচালক আলী  হোসেন সরকার। আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বসুন্ধরার ত্রাণ সহায়তা পান কর্মহীন হয়ে পড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৪৫ জন। দেবগ্রাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আখাউড়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবদুল মমিন বাবুল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. বাবুল মিয়া। এর আগে দুপুরে কসবায় ও বুধবার বিকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরে বসুন্ধরার ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করা হয়। সব মিলিয়ে ১৫০ জনের মাঝে বিতরণ কার্যক্রমের সমন্বয় করেন বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের আঞ্চলিক বিক্রয় ব্যবস্থাপক মো. মুকিতুল ইসলাম। আমাদের পাবনা প্রতিনিধি জানান, গতকাল পাবনার আরও তিনটি উপজেলার ১ হাজার পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপ। বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ’র পাঠক সংগঠন শুভসংঘ প্রত্যেক পরিবারের মাঝে সুষ্ঠুভাবে এই খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন। এর মধ্যে চাটমোহর উপজেলার সরকারি কলেজ মাঠে ৪০০, ভাঙ্গুরা উপজেলার ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠে ৩০০ এবং ফরিদপুর উপজেলার পৌর মহিলা কলেজ মাঠে ৩০০ পরিবারকে এই সহায়তা দেওয়া হয়। এর আগের দিন পাবনা সদর, আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদীতে ১১০০ অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে বসুন্ধরা গ্রুপ। গতকাল খাদ্য সহায়তা পেয়ে বৃদ্ধ আফজাল বেপারী বলেন, ‘তোমাকের (তোমাদের) এই চাল, ডাল, আটা পাইয়া আমরা স্বামী-স্ত্রী ১৫-২০ দিন খাবার পারুম। আল্লা (আল্লাহ) তোমাকের হায়াত দান করুক।’ চাটমোহরে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল হামিদ মাস্টার বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান সোবহান সাহেবকে ও তার পরিবারকে আমি ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। তিনি সারা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার একটি মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন। এটা অনেক বড় কাজ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সৈকত ইসলাম বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকে। করোনার এই ক্রান্তিকালেও তারা বরাবরের মতো দুস্থ মানুষকে সহায়তা করছে। এ জন্য আমি বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। ভাঙ্গুরার পৌর  মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ করোনা ছাড়াও সব সময় মানুষের পাশে এগিয়ে আসে। মহামারী সময়ে তারা অক্সিজেনও সরবরাহ করছে। আল্লাহ যেন বসুন্ধরা গ্রুপকে আরও সহায়তা করার তৌফিক দেয়। তাদের পরিবার যেন সুখে থাকে। ফরিদপুর উপজেলায় ত্রাণ বিতরণের সময় উপস্থিত হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান  গোলাম হোসেন গোলাম বলেন, সরকারের পর বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য আমি উপজেলার পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপকে আর শুভসংঘকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজার সদরে প্রথম পর্যায় শেষে দ্বিতীয় পর্যায়ে উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়ন ১ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। গতকাল কক্সবাজার সরকারি কলেজের মাঠে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এর আগে ১১ আগস্ট সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নে ১ হাজার ৫০০ পরিবারের মাঝে বসুন্ধরার ত্রাণ বিতরণ করা হয়। গতকাল কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি (কক্সবাজার) তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কামরুল আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন রায় প্রমুখ। খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে এডিসি জাহিদ ইকবাল বলেন, মহামারী করোনায় সাধারণ মানুষ বেকার হয়ে পড়ছেন। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সরকারের পাশাপাশি বসুন্ধরা গ্রুপ সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। স্বনামধন্য এই গ্রুপের এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার এলাকার ভোগ্যপণ্য লোড-আনলোডে নিয়োজিত ১০০ শ্রমজীবী মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী। পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব উপহার বিতরণ করা হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার বিকালে নগরের খাতুনগঞ্জ-চাক্তাই এলাকায় মকবুল সওদাগর সড়কে ভোগ্যপণ্য লোড-আনলোড কাজে নিয়োজিত শ্রমজীবী মানুষের (লেবার) মধ্যে উপহার বিতরণ করা হয়। ৩০০ শ্রমজীবী মানুষের হাতে সরাসরি এসব উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। উপহার প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন এম. আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন শিহাব, পরিচালক মো. ফরহাদ, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজের (বাল্ক) চট্টগ্রাম ডিভিশনের এরিয়া সেলস ম্যানেজার মো. আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর