চট্টগ্রাম মহানগরের ষোলশহর চশমাহিলে সিএনজি অটোরিকশা খালে পড়ে নিখোঁজ হন তিনজন। পরে চালকসহ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ জুন এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ১৯ জুন চান্দগাঁও বি-ব্লকে জলাবদ্ধ সড়কে অটোরিকশায় তিন নারী যাচ্ছিলেন কর্মস্থলে। থইথই পানিতে চালক সড়ক আর নালা চিহ্নিত করতে পারেননি। অটোরিকশাটি পড়ে যায় নালায়। পথচারীদের সহায়তায় তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও তারা আহত হন। সর্বশেষ বুধবার প্রবল বর্ষণে তলিয়ে যায় পুরো মহানগর। জলাবদ্ধতায় একাকার হয়ে যায় নালা-সড়ক। মুরাদপুর মোড়ে নালায় পা পিছলে পড়ে যান সালেহ আহমদ নামে এক ব্যবসায়ী। দুই দিন পার হলেও তার সন্ধান মেলেনি।
এভাবে মহানগরের নালা-নর্দমা ও সড়কপাশের খালগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় মহানগর। পানিতে একাকার হয়ে যায় সড়ক-নালা-নর্দমা ও ছোট ছোট খাল। এসব খাল-নালায় রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান উল্টে মানুষ হতাহত হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে সেবা সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ বা প্রতিকারের ব্যবস্থা দেখা যায় না।
মহানগরবাসীর অভিযোগ, মহানগরে অনেক নালা-নর্দমা ও সড়কের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া খাল-নালা-নর্দমা আছে, যেগুলো বৃষ্টি হলেই একাকার হয়ে যায়। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটে সেবা সংস্থাগুলোর নাকের ডগায়। কিন্তু এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। সংস্থাগুলো এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। মহানগরের প্রায় কোনো নালার পাশেই নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা হয়নি।চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, ‘মহানগরে অনেক বড় বড় নালা-নর্দমা আছে। জলাবদ্ধতা হলে এসব নালা সড়কের সঙ্গে মিলে যায়। এ নিয়ে কয়েকটি দুর্ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে চসিক বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।’
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এরপর তা রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে সিটি করপোরেশন। বর্তমানে সিডিএ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও সড়কের পাশের নালা-নর্দমা রক্ষণাবেক্ষণ করে চসিক। এ ব্যাপারে চসিককে উদ্যোগ নিতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুরাদপুরে যে নালায় পা পিছলে পথচারী পড়ে গেছেন, এমন নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া নালা-নর্দমা মহানগরে আরও অনেক আছে। এর মধ্যে আছে মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বড় উন্মুক্ত নালা, বহদ্দারহাট থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের পাশ, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশে নিরাপত্তা দেয়াল ছাড়া নালা-নর্দমা।
বর্তমানে মহানগরে ছোট-বড় খাল আছে ৫৭টি। এসব খালের দৈর্ঘ্য ১৬১ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ৭ দশমিক ২৮ মিটার। পাকা ফুটপাথ আছে ১৬৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১ দশমিক ৮০ মিটার গড় প্রস্থের মোট ১৩৮টি। প্রতিরোধ দেয়ালের মোট দৈর্ঘ্য ১০২ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ১ দশমিক ২৫ মিটার। মোট কালভার্ট ১ হাজার ৫৪টি।