বরিশাল সিটি করপোরেশন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে বরিশালের রাজনীতি পরিচালনার পাশাপাশি নগরবাসীকে দুর্নীতিমুক্ত টেকসই সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বরিশালের নাগরিক সমাজের এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তাদের বিভিন্ন অভিমত শোনার পর এই প্রতিশ্রুতি দেন। কোনো ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা বলেন। জুম সভায় বিশিষ্ট নাগরিকরা সিটি মেয়রের এই মনোভঙ্গির প্রশংসা করেন। ভার্চুয়াল সভা সঞ্চালনা করেন উদীচী বরিশাল ও সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন। ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, নগরীর ৩টি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, বিশিষ্ট আলেম, সাংস্কৃতিক-সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠক, সিনিয়র সাংবাদিক, স্থপতি, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী নেতাসহ ২৫ জন বিশিষ্ট নাগরিক সংযুক্ত ছিলেন।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন তার দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে কোনো হস্তক্ষেপ না করায় মেয়রের প্রশংসা করেন।
তিনি মেয়রকে বিচক্ষণতার সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতি পরিচালনা এবং নগরবাসীর সেবায় আরও আত্মনিয়োগ করার পরামর্শ দেন। মেয়রকে সতর্ক করে উপাচার্য বলেন, অনেকে অনেক কথা বলবে, সেগুলো কানে না নিয়ে নগরীর উন্নয়ন ও নগরবাসীর সেবা আরও ত্বরান্বিত করলে তবেই স্থায়ীভাবে জনমনে জায়গা করে নেওয়া যাবে।
বরিশালের ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কবি অধ্যাপক নজমুল হোসেন আকাশ জুম সভায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে কথাবার্তায় আরও সংযত হওয়ার পরামর্শ দেন।
সব জায়গায় স্বভাবসুলভ ভাষায় বক্তব্য না দিয়ে প্রয়োজনবোধে কৌশলী বক্তব্য দেওয়ার জন্য মেয়রকে অনুরোধ জানান সময় সংবাদের ব্যুরোপ্রধান ও ইলেকট্র্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরদাউস সোহাগ।
নগরবাসীকে দেওয়া উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য মেয়রকে তাগিদ দেন বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. গোলাম কিবরিয়া।
গত ১৮ আগস্টের আলোচিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাসোসিয়েশন প্রদত্ত বিবৃতিতে বরিশালকে সন্ত্রাসের জনপদ এবং মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে সন্ত্রাসের গডফাদার উল্লেখ করায় ক্ষোভ জানান সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা। বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে বরিশাল নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তারা ওই অমূলক বিবৃতি প্রত্যাহারের দাবি জানান। ক্ষমতাসীনদের ব্যানারে নগরীর বিভিন্ন বাজারে অতিরিক্ত টোল আদায় এবং নদীবন্দরসহ নদীর বিভিন্ন ঘাটে পণ্য ওঠানামায় জোর-জুলুমের প্রতিকার দাবি করেন আলোচকরা।
এ ছাড়া আলোচকরা নগর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, নগরভবনে ঘুষ-বখশিশমুক্ত সেবা প্রদান, সঠিক প্ল্যান অনুমোদন, টেকসই সড়ক নির্মাণ, নগরীর ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মাসিক ভাতা প্রদান ও আলেমদের জন্য ইমাম ভবন নির্মাণসহ মেয়রের নানা কাজের প্রশংসা করেন। বরিশাল নগরীর ব্যাপক উন্নয়নে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া ৩টি বড় উন্নয়ন প্রকল্পে দ্রুত অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জুম সভায় দাবি জানান বিশিষ্টজনরা।
আলোচক-সমালোচকদের জবাবে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, বরিশালে ১৮ আগস্টের ঘটনা ছিল একটা ভুল বোঝাবুঝি। সেটার অবসান হয়েছে। রাজনীতিবিদ, প্রশাসন ও পুলিশ একে অপরের পরিপূরক। এই ৩টি ইউনিট একত্রে কাজ করলে কোনো সমালোচনা হয় না। তিনি বরিশালের উন্নয়নে সরকারের গৃহীত সব উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার জন্য প্রশাসন ও পুলিশসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান।