মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কারও সর্বনাশ কারও পৌষ মাস!

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

কারও সর্বনাশ কারও পৌষ মাস!

বিশ্বাস ও আস্থার ওপর ভর করে শত বছর ধরে চলে আসা চাকতাই-খাতুনগঞ্জের বাণিজ্যে ধরেছে ‘ঘুণ’। একের পর এক প্রতারণা ঘটনার কারণে জৌলুস হারাতে বসেছে দেশের ভোগ্যপণ্যের এ বড় বাজার। এ বাজারের অনেক ব্যবসায়ীই এখন বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি হয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। আর্থিক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ওভার ট্রেডিং ও অতিমুনাফার কারণে খাতুনগঞ্জ এবং চাকতাইয়ে ব্যবসায়িক প্রতারণা হচ্ছে। আর্থিক প্রতারণা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যারা প্রতারণা করেছেন তাদের জন্য খাতুনগঞ্জ ও চাকতাইয়ে ব্যবসার পথ চিরতরে রুদ্ধ করা হয়েছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে খাতুনগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, খাতুনগঞ্জ ও চাকতাইয়ে একের পর এক আর্থিক প্রতারণার মূল কারণ বিচারহীনতা। প্রতারণার নেপথ্যে রয়েছেন বণিক সমিতির কয়েকজন নেতা ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতাকারী সিন্ডিকেট। এ বাজারে কোনো প্রতারণা ঘটলে ওই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়। তারা উভয় পক্ষকে নিয়ে সালিশ বৈঠক আয়োজন করে। বৈঠকে নামমাত্র অর্থের বিনিময়ে দুই পক্ষে সমঝোতা হয়। বিনিময়ে মধ্যস্থতাকারীরা অর্থ লুটপাটকারীর কাছ থেকে নেন প্রতারণার ২০-২৫ শতাংশ। গত পাঁচ বছরে অভিন্ন কায়দায় মধ্যস্থতা করে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবৈধভাবে আয় করেছেন কোটি কোটি টাকা। অনেকে আবার টাকার পরিবর্তে নিয়েছেন বাড়ি কিংবা জমি।

জানা যায়, শত বছরের অধিক সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী এ বাজারে আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে বাণিজ্য করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। মুখের কথায় বাকিতে কিংবা চেকের মাধ্যমে এখনো ব্যবসা করছেন পাইকারি ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। কিন্তু এ আস্থা ও বিশ্বাস পুঁজি করে আর্থিক প্রতারণায় নেমেছেন কিছু ব্যবসায়ী। গত ১০ বছরে খাতুনগঞ্জে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার অধিক চেক, ডিও ও আর্থিক প্রতারণা ঘটেছে। ১৯৮৬ সালে বিভূতি রায় নামে এক ব্যবসায়ী ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে খাতুনগঞ্জের আস্থা ও বিশ্বাসে চির ধরান। এরপর ১৯৯২ সালে কান্তি সাহা ৩ কোটি, ১৯৯৪ সালে বিশ্বনাথ স্টোর ৪ কোটি, সিরাজ মিয়া ৩ কোটি, অন্নপূর্ণা ভা-ার ৩ কোটি, গৌর ভা-ার ৩ কোটি, ২০০৬ সালে বাগদাদ ট্রেডিং ১০ কোটি, আল হোসাইন ব্রাদার্স ১০ কোটি, ২০০৮ সালে শাহজাহান ট্রেডার্স ২৪ কোটি, আলম তারা ইয়াসিন ৩০ কোটি, ২০১০ সালে পায়েল আশুতোষ মহাজন ৯০ কোটি, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ ১৪৫ কোটি, ২০১৩ সালে ইয়াছিন এন্টারপ্রাইজ ১৫৫ কোটি, মা এন্টারপ্রাইজ ৩৭ কোটিসহ শতাধিক প্রতারণা ঘটে খাতুনগঞ্জ ও চাকতাইয়ে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর