সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিচারকদের ভাতা বৃদ্ধির বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

উচ্চ আদালতের বিচারকদের দেশের ভিতরে ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি করে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ভ্রমণ ভাতা) বিল-২০২১’ পাস করেছে জাতীয় সংসদ। ফলে এখন একজন বিচারক দায়িত্ব পালনে সদর দফতরের বাইরে থাকলে ছুটির দিনসহ দৈনিক ১ হাজার ৪০০ টাকা হারে ভাতা পাবেন। বর্তমানে উচ্চ আদালতের একজন বিচারক সুপ্রিম কোর্ট সদর দফতরের বাইরে দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক ৪০০ টাকা করে ভাতা পান। সংসদের ১৫তম অধিবেশনের সমাপনী দিনে গতকাল বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। গত শনিবার বিলটি সংসদে উত্থাপিত হয়। বিলে বলা হয়, সড়কপথে ভ্রমণের জন্য একজন বিচারক প্রতি কিলোমিটার ৩ টাকা ৭৫ পয়সা হারে ভাতা পাবেন। বর্তমানে এক্ষেত্রে একজন বিচারক পান প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা হারে। এ ছাড়া রেলপথ, নৌপথ ও আকাশপথে ভ্রমণের বিভিন্ন ভাতার প্রস্তাব করে বলা হয়েছে, যে ক্ষেত্রে ভ্রমণের জন্য একাধিক যাত্রাপথ রয়েছে, সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত এবং স্বল্প ব্যয়ের ভ্রমণ ভাতা দাবি করতে হবে। বিলে বলা হয়েছে, কোনো বিচারক ছুটিতে গেলে, ছুটি থেকে ফেরত আসলে কিংবা বিদেশে ছুটি কাটিয়ে আবার দায়িত্বে যোগ দেওয়ার জন্য ফিরলে, কিংবা অবসর পরবর্তীকালে নিজ বাসস্থানে ফিরে আসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ট্রেনে, লঞ্চে, জাহাজে বা স্টিমারে ভ্রমণ করে নিজের জন্য ভাড়া পরিশোধ ছাড়া উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত দুই বার্থের প্রথম শ্রেণির একটি কম্পার্টমেন্ট বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের একটি কম্পার্টমেন্ট বা প্রথম শ্রেণির কেবিন পাবেন। আকাশপথে ভ্রমণ করলে নিজের পরিশোধিত ভাড়া পাবেন। কোনো বিচারক পদে যোগ দেওয়ার সময় ভ্রমণের জন্য স্ত্রী বা স্বামী, সন্তান ছাড়াও তিনজন ব্যক্তিগত পরিচারকের জন্য সর্বনিম্ন হারে সড়ক, রেল বা স্টিমার ভাড়া পাবেন।

পরিবহন খাত কে নিয়ন্ত্রণ করছে প্রশ্ন জি এম কাদেরের : শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবির বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। এ সময় তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি এই খাতের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করছেন?’ তিনি জানতে চান, ‘পরিবহন খাত কে নিয়ন্ত্রণ করছে, সরকার নাকি মালিক-শ্রমিক সমিতি?’ সংসদের সমাপনী দিনে গতকাল তিনি এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেন। দেশের বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি এবং নিজ দলীয় সংসদ সদস্য হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাকে পাশে রেখেই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তখন পাশ থেকে রাঙ্গাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা গরিব। সবচেয়ে গরিব।’ জি এম কাদের বলেন, ‘মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে। ডিজেলচালিত বাসের জন্য একটা আর গ্যাসের জন্য একটা। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে একই ভাড়া। একটা অনিয়মের চিত্র দেখা গেল।

সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশন সমাপ্ত : স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রস্তাব গ্রহণসহ পাকিস্তান বিতর্কে সরগরম একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশন শেষ হয়েছে গতকাল। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে সংসদে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্মারক ভাষণ দেন। দুই দিন আলোচনার পর গৃহীত হয় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর প্রস্তাব।

সংসদে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপিকে পাকিস্তান প্রেম পরিহারের আহ্বান জানান সরকারের শরিক দলের এমপি রাশেদ খান মেনন। এ ছাড়া চলতি অধিবেশনে ঋণ খেলাপি, বিদেশে অর্থ পাচার, জ¦ালানির দাম বাড়ানো, বাসভাড়া বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়াসহ নানা বিতর্কের মধ্যে এই অধিবেশন বেশ সরগরম হয়ে উঠেছিল। এবারের ৯ কার্যদিবসের অধিবেশনে ৯টি বিল পাস হয়েছে। অধিবেশন শুরু হয়েছিল গত ১৪ নভেম্বর।

এবারও করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংসদ অধিবেশন পরিচালিত হয়। কভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ থাকা সংসদ সদস্যরাই অধিবেশনে যোগ দেন। প্রতিদিন রোস্টার করে ১০০-১২০ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে সংসদের বৈঠক হয়। এর মধ্যে গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদে বিশেষ আলোচনার জন্য প্রস্তাব তোলেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে পুরস্কার চালু করায় জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা- ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ জানাতে জাতীয় সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

গতকাল অধিবেশন সমাপনী সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করে অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।  এ সময় তিনি জানান, এবারের অধিবেশনে ৯টি বিল পাস হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৪১টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, যার মধ্যে তিনি ১০টির উত্তর দিয়েছেন। অন্য মন্ত্রীদের এক হাজার ১২টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, যার মধ্যে মন্ত্রীরা ৫৬৬টি প্রশ্নের উত্তর দেন। এর আগে সংসদ কক্ষে  দেখানো হয় ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকার  রেসকোর্স ময়দানে ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনের জয়ের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ।

এই অধিবেশন চলাকালীন টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন মারা যান।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর