শুক্রবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

পার্কের উন্নয়নে ১২ কোটি টাকার প্রকল্প!

জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুল, বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে আবার নির্মাণের প্রস্তাব

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুল, বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে চট্টগ্রামে একটি পার্কের সংস্কার করতে চায় গণপূর্ত অধিদফতর, যেটির জন্য ১২ কোটি ১২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে অযৌক্তিক ব্যয় ও প্রস্তাবে নানা ত্রুটি থাকায় নতুন করে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার জাতিসংঘ পার্কের উন্নয়নে সরকারি অর্থে এই প্রকল্প প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে ডিপিপি পাঠিয়েছিল গণপূর্ত অধিদফতর। গত ২৭ অক্টোবর পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) প্রস্তাবটির মূল্যায়ন করে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের এই উদ্যানটিতে সিটি করপোরেশনের টাকায় জিমনেসিয়াম ও সুইমিং পুল নির্মাণ করা হয়। এখন এ দুটি স্থাপনা ভেঙে আবার নতুন করে নির্মাণ করতে চাইছে গণপূর্ত অধিদফতর। এ ছাড়া উদ্যানের বাউন্ডারি ও ওয়াকওয়ে ভেঙেও নতুন করে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এসব প্রস্তাবের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পিইসি সভায়।  পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের প্রতিনিধি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ উদ্যানে জিমনেসিয়াম ও সুইমিং পুল নির্মাণে অর্থ ব্যয় হয়েছে সিটি করপোরেশন থেকে। এগুলো ভেঙে ফেলে পুনর্নির্মাণ করতে পুনরায় অর্থ ব্যয় হবে। এক্ষেত্রে স্থাপনা দুটি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করার বিষয়ে জানতে চান তিনি। জবাবে গণপূর্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ওই দুটি স্থাপনা মানসম্মতভাবে নির্মাণ করা হয়নি। তাই সেগুলো ভেঙে পুনর্নির্মাণের সংস্থান রাখা হয়েছে।  সূত্র জানায়, গণপূর্তের এই যুক্তি ধোপে টেকেনি পিইসি সভায়। এর বদলে জিমনেসিয়াম ও সুইমিং পুল দুটির বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে এটি  ভেঙে পুনর্নির্মানের প্রয়োজন আছে কি-না, সে সম্পর্কে জানাতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই কমিটিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং গণপূর্তের প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে।    পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১২ কোটি টাকার এই প্রকল্প প্রস্তাবটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন’। এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২ বছর ৭ মাস। প্রথমেই এর নাম ও সময় নিয়ে আপত্তি উঠে পিইসি সভায়। বলা হয়, প্রকল্পের নাম দেখে মনে হয় যে নতুনভাবে একটি উদ্যান স্থাপন করা হচ্ছে। কিন্তু এ উদ্যানটি আগে থেকে বিদ্যমান। সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপনের পরিবর্তে উন্নয়ন শিরোনাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর প্রকল্পটি ছোট বিধায় এর সময়সীমা কমিয়ে এক বছর ৬ মাস করার বিষয়ে ঐকমত্য হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পে ভূমি উন্নয়নে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পাঁচলাইশ উন্নত আবাসিক এলাকা হিসেবে উদ্যানের ভূমি উন্নয়নের কারণ জানতে চান পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ উইংয়ের প্রতিনিধি। জবাবে গণপূর্ত অধিদফতরের প্রতিনিধি জানান, রাস্তার চেয়ে উদ্যানটি প্রায় ৫ ফুট নিচু। ফলে পানি জমে যায়। শেষে ব্যয় কমিয়ে ৩ ফুট উচ্চতা ধরে ভূমি উন্নয়নের সিদ্ধান্ত হয়। ডিপিপিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ১৫ জন জনবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। মোটরসাইকেল ক্রয়, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও ব্যয় বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।

 তবে ছোট একটি প্রকল্পের এসব অযৌক্তিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রকল্পে এর আগেও মোটরসাইকেল কেনা হয়েছে। পার্কের সংস্কার কাজের জন্য  মোটরসাইকেল কেনার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং পুরনো স্থাপনা অপসারণ এসব ব্যয় বাদ দেওয়া উচিত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর