সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ে নেওয়া হয় তৃণমূলের ভোট। ২০ ভোটের মধ্যে ১৩ ভোট পেয়ে তৃণমূলের নৌকার মাঝি নির্বাচিত হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী আকবর চৌধুরী। তৃণমূলের ভোটে আলী আকবরের বিজয়ের খবরে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা মিষ্টিমুখও করেন। কিন্তু তৃণমূলের সেই পছন্দের প্রার্থী বদলে যায় কেন্দ্রে। আলী আকবরকে বাদ দিয়ে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয় ৭ ভোট পাওয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বিলাল আহমদের নাম। তৃণমূলের পছন্দকে উপেক্ষা করে ‘ক্লিন ইমেজের’ আলী আকবরকে বাদ দিয়ে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা হয় হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি বিলালের। বিলালের আরেক ভাই হত্যা মামলায় বর্তমানে কারান্তরিন রয়েছেন। তার বাবাও ছিলেন পৃথক হত্যা মামলার আসামি। দলীয় প্রার্থী করায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় বিষাদ। শুধু কানাইঘাটের রাজাগঞ্জই নয়, ইউপি নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে গিয়ে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রে লবিং এবং মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আশানুরূপ ফলাফল করতে পারছে না বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচন। ওইদিন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায়। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ দুই উপজেলায় বর্ধিত সভা করে। সভায় তৃণমূলের নেতারা ভোটের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত করেন। তৃণমূলের নির্বাচিত প্রার্থীদের তালিকা জেলা থেকে পাঠানো হয় কেন্দ্রে। কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে কানাইঘাটের ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ৪টির প্রার্থী পরিবর্তন হয়ে যায়।
রাজাগঞ্জে আলী আকবরের পরিবর্তে বিলাল আহমদ, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোতা মিয়ার পরিবর্তে তৃণমূলের ভোটে তৃতীয় হওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান জেমস লিও ফারগুসন নানকা, দিঘীরপাড় ইউনিয়নে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাছিতের পরিবর্তে বর্তমান চেয়ারম্যান আলী হোসেন কাজল এবং ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হারুন রশিদের পরিবর্তে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম আহমদের নাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে দলীয় প্রার্থী পরিবর্তনের কারণে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটকে গুরুত্বহীন বলে মনে করছেন তারা।এদিকে, এর আগের ধাপের নির্বাচনগুলোতেও কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন করা হয়েছে তৃণমূলের প্রার্থী। চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে গোলাপগঞ্জ উপজেলার উত্তর বাদেপাশা ইউনিয়নে তৃণমূলের প্রার্থী আলিম উদ্দিনকে বাদ দিয়ে প্রার্থী করা হয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদকে। আর বুধবারী বাজারে ১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হালিমুর রশিদ রাপুকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এক ভোট পাওয়া আবদুর রহমানকে। বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পলাশ আফজালের পরিবর্তে বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, মোল্লাপুরে উপজেলা সহসভাপতি আশরাফুল ইসলাম আশরাফকে বাদ দিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামীম আহমদকে ও তিলপাড়ায় প্রার্থী পরিবর্তন করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এমাদ উদ্দিনকে।
এদিকে, এর আগের ধাপগুলোতেও যেসব ইউনিয়নে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থী কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগেই ভালো ফলাফল করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটের ডৌবাড়ি ইউনিয়নে তৃণমূলের ভোটে বিজয়ী হয়েও দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম নিজাম উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারে তৃণমূলের নেতারা প্রার্থী মনোনীত করেছিলেন সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম শায়েস্তাকে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সদরুল ইসলামকে। নির্বাচনে সদরুলকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শায়েস্তা। এ ছাড়াও সিলেটের আরও কয়েকটি ইউপিতে কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন করা প্রার্থীকে পরাজিত করে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থীরা বিদ্রোহী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
প্রার্থী পরিবর্তন প্রসঙ্গে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, প্রতিটি উপজেলায় বর্ধিত সভা করে তৃণমূলের প্রত্যক্ষ ভোটে আমরা প্রার্থী বাছাই করি। তৃণমূলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের ভোটের সংখ্যা উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় মতামত দিয়ে আমরা কেন্দ্রে তালিকা পাঠাই। এরপর কেন্দ্র থেকে অনেক সময় প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে পরিবর্তন করা হয়। অনেক সময় তৃণমূলের ভোট কম পেলেও বর্তমান চেয়ারম্যানদের কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে।’