মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বদরুদ্দীন উমরের ৯০তম জন্মবার্ষিকী

‘তার লেখা পাকিস্তানের আদর্শিক ভিত্তি খন্ডন করেছিল’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

দেশের বামপন্থি আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর মুসলিম লীগের রাজনীতি তার পারিবারিক অবস্থা থেকে দেখেছিলেন। তাই সাম্প্রদায়িকতা কী-সেটা বোধহয় বদরুদ্দীন উমরের থেকে কেউ ভালো করে বোঝেননি। তিনি যে ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামের প্রবন্ধ ও বই লিখেছিলেন, এই দুই-তিনটি ছোট লেখা পাকিস্তানের আদর্শিক ভিত্তি একেবারে খন্ডন করে দেয়।

বদরুদ্দীন উমরের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আবুল কাশেম ফজলুল হক। ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কমিউনিস্ট বিপ্লবী কমরেড বদরুদ্দীন উমরের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ১৯৬০ এর দশকে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক ‘পূর্বমেঘ’ নামে একটি পত্রিকায় উমরের লেখা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ প্রকাশিত হয়। সেই লেখা আলোড়ন সৃষ্টি করে। ‘সাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটি পাকিস্তান আমলে নানাভাবে বলা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার ‘কমিউনালিজম’ শব্দটি ভারতবর্ষের রাজনীতিতে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে। বাংলাদেশ আমলেও আমরা এর থেকে মুক্তি পাইনি। তিনি আরও বলেন, বদরুদ্দীন উমর তার প্রথম জীবনে পরিচালিত ও প্রভাবিত হয়েছিলেন তার পিতার দ্বারা। তার পিতা আবুল হাকিম, ১৯৪০ এর দশকে বেঙ্গল মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনেক সিদ্ধান্ত সভায় তিনি বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ‘ইসলামের মর্মবাণী’ নামে একটি পুস্তিকাও রচনা করেছিলেন। মানুষের জীবনে চিন্তাভাবনা-অভিজ্ঞতা পরিবর্তিত হয়। তিনি যে সাম্প্রদায়িকতা নামের প্রবন্ধ লিখেছিলেন, বই লিখেছিলেন, এই দুই-তিনটি ছোট লেখা পাকিস্তানের আদর্শিক ভিত্তি একেবারে খন্ডন করে দেয়। এই লেখাগুলোর আগেই হয়তো তিনি তার পিতার মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, তিনি বেশি দিন উদার গণতন্ত্রের ওপরও ভর করেননি। ধনিক কৃষক মধ্যবিত্ত, এরাই তো সমাজের শতকরা আশি ভাগ লোক। তাদের স্বার্থে উদার গণতন্ত্র চিন্তা করে না। ফলে তিনি সমাজতন্ত্রের দিকে আকৃষ্ট হয়েছেন। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সমকালীন ঘটনা ও ভাষা আন্দোলনসহ নানা বিষয়ে কমরেড বদরুদ্দীন উমরের ১০৯টির মতো বই প্রকাশিত হয়েছে। তার সব লেখার সঙ্গে আমরা একমত নাও হতে পারি। কিন্তু বামপন্থি আন্দোলনে যুক্ত মানুষেরা তার দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছি। তার কাছে বামপন্থি আন্দোলনের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু সেই প্রত্যাশা তিনি পূরণ করতে পারেননি। সেই দায় তার একার নয়, বরং আমরা যারা বামপন্থি আছি, আমরা সেই ভূমিকায় তাকে নিয়ে আসতে ভূমিকা রাখতে পারিনি। প্রত্যাশা পূরণ না হলেও কমরেড বদরুদ্দীন উমর তার জীবন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বামপন্থিদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করেছেন। জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিমের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ও গ্রামীণ মজুর ফেডারেশনের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল হাকিম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের জাতীয় পরিষদের সদস্য ভুলন ভৌমিক, লেখক সৈয়দ আবুল কালাম, প্রাবন্ধিক নুর মুহাম্মদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের একাংশের সভাপতি মিতু সরকারসহ অনেকে।

সর্বশেষ খবর