শনিবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে জালিয়াতরা চীন থেকে ব্যান্ডরোল এনে বিপণন করছে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে সিগারেট ব্যান্ডরোলের (স্ট্যাম্প) ভয়াবহ প্রতারণা ও জালিয়াতি চলছে। প্রতারণার মাধ্যমে ব্যান্ডরোল একাধিকবার ব্যবহার ও বিদেশ থেকে জাল ব্যান্ডরোল আমদানি করে বাজারে ছাড়ছে কয়েকটি প্রতারক ও জালিয়াত চক্র। ব্যান্ডরোল প্রতারণা ও জালিয়াতির কারণে প্রতি বছরই শত শত কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। সম্প্রতি আড়াই শ কোটি টাকা সমমূল্যের জাল ব্যান্ডরোলের দুটি চালান জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এ দুই ঘটনায় হওয়া দুটি মামলা তদন্ত করছে সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চল। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জাল ব্যান্ডরোল মামলা তদন্ত করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির। তাদের গ্রেফতারের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’ চক্রের কাছে নিয়মিত ব্যান্ডরোল বিক্রি করেন মহানগরের কাজির দেউরীর পান দোকানদার কবির আহমেদ। তিনি বলেন, ‘দু-এক মাস পরপর আমার কাছ থেকে সিগারেটের লেভেল কিনে নেন নাম না জানা এক ব্যক্তি।’ প্রতি কেজি লেভেলের জন্য তাকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, পান দোকানদার কবির আহমেদই শুধু নন, চট্টগ্রাম নগরে গড়ে উঠেছে সিগারেট ব্যান্ডরোলের ভয়াবহ প্রতারণা ও জালিয়াতির বেশ কয়েকটি চক্র। এ চক্রগুলোর নেতৃত্বে রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আলোচিত-সমালোচিত একজন কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা। তাদের নেতৃত্বাধীন চক্রের সদস্যরা নগরের বিভিন্ন পান ও সিগারেটের দোকান থেকে সিগারেটের ব্যান্ডরোল বা লেভেল সংগ্রহ করেন। প্রতি কেজি ব্যান্ডরোলের জন্য পান ও সিগারেট দোকানদারকে দেওয়া হয় ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। পরে এগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন টোব্যাকো কোম্পানির কাছে। ব্যবহার করা ব্যান্ডরোল সংগ্রহ ছাড়াও এ চক্রের সদস্যরা চীন থেকে জাল ব্যান্ডরোল টোব্যাকো কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন। সম্প্রতি বড় দুটি সিগারেটের জাল ব্যান্ডরোল জব্দ করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এ দুটি চালানে আড়াই শ কোটি টাকা সমমূল্যের ব্যান্ডরোল জব্দ হয়। এ চালানগুলোর মধ্যে ২২ ডিসেম্বর কাগজের আড়ালে ১ কোটি ৬২ লাখ পিস ১০ শলাকাবিশিষ্ট সিগারেটের জাল ব্যান্ডরোল জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ওই চালানটি খালাস হলে সরকার কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাত। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর ৩ কোটি ১৯ লাখ ৮০ হাজার পিস ১০ শলাকাবিশিষ্ট সিগারেটের প্যাকেটে ব্যবহার-উপযোগী জাল ব্যান্ডরোলের আরও একটি চালান জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ওই চালানটি খালাস হয়ে গেলে সরকার দেড় শ কোটি টাকা রাজস্ব হারাত। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, জাল ব্যান্ডরোল আমদানির সময় কাগজ আমদানির মিথ্যা ঘোষণা দেওয়া হয়। চীনের শেনঝেন থেকে জাল ব্যান্ডরোলের দুটি চালান আসে। কিন্তু শুল্ক কর্মকর্তারা পরীক্ষার সময় দেখতে পান ভিতরে বিপুল পরিমাণ সিগারেট ট্যাক্স স্ট্যাম্প লুকানো। পরে তা জব্দ করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের পোর্ট কন্ট্রোল ইউনিট (পিসিইউ) রপ্তানি ও আমদানিকারকের নথি ও ট্রেডিং তথ্য যাছাই করে এ চালানের জালিয়াতির সব তথ্য চিহ্নিত করে।

কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এসআর অনুযায়ী ব্যান্ডরোল দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার কর্তৃক দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও সিগারেটর উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সিগারেটের ব্যান্ডরোল সরবরাহ ও ব্যবহার যাচাই করে। সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যান্ডরোল কেনা বা আমদানির সুযোগ নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর