শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

উত্তরাঞ্চলে বাণিজ্যের হাতছানি

সম্প্রসারণ হচ্ছে বিমানবন্দরের রানওয়ে, আমনুরায় পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর, নৌপথ চালুর উদ্যোগ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

উত্তরাঞ্চলের সবজি, মাছ যাচ্ছে সারা দেশে। কার্গো সুবিধা পেলে সম্ভাবনা আছে বিদেশে রপ্তানির। আগে থেকেই আম যাচ্ছে বিদেশে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরায় হতে যাচ্ছে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর। ফলে ভারত থেকে পণ্য আমদানি আগের চেয়ে সহজ হবে। রাজশাহী-ধুলিয়ান নৌপথ চালুর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। নৌপথটি চালু করা গেলে ভারত থেকে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি সহজতর হবে। ফলে উত্তরাঞ্চলের তিন পথেই বাণিজ্যের হাতছানি দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের জন্য অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণ, রানওয়ে সম্প্রসারণ ও কার্গো বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা থাকছে আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায়। প্রাথমিকভাবে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা। এ বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সময় ও ব্যয় বাড়ছে। প্রকল্পটি শেষ হলে পিছিয়ে পড়া রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিজাত পণ্য দ্রুত বহির্বিশ্বে রপ্তানিসহ শিল্পায়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শাহ মখদুম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, বর্তমানে একটির বেশি উড়োজাহাজ রানওয়েতে নামতে বা উঠতে পারে না। তবে বিমানবন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্প শেষে হলে একই সঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ দাঁড়াতে পারবে। কারণ কার্গো বিমান ওঠানামাসহ একসঙ্গে তিনটি উড়োজাহাজ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রেখেই এবার আধুনিকায়ন করা হচ্ছে এ বিমানবন্দর। রাজশাহী-২ আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশা জানান, এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কার্গো বিমান। যাতে কৃষিজাত পণ্য দ্রুত দেশের বাইরে রপ্তানি করা যায়। বিমানবন্দরটির সংস্কার শেষ হলে এ অঞ্চলের মানুষ সে সুবিধা পাবে।

আড়াই শ বছরের পুরনো রেলজংশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুরা। ব্রিটিশের তৈরি রেলজংশনটি একসময় ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছিল বৃহত্তর রাজশাহীর। ভারতীয় পণ্য বিশেষ করে বিহারের পাকুড় থেকে উত্তোলন করা উন্নতমানের পাথর আমনুরা জংশনের মাধ্যমে গেছে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুতে। আমনুরা ত্রিদেশীয় করিডোরমুখী একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলজংশন। বরেন্দ্র অঞ্চলের ১৩০ একর জমির ওপর আমনুরা জংশনের অবস্থান। এখানে পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর গড়ে তোলার পরিকল্পনা রেল মন্ত্রণালয়ের। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে। পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রেলবন্দর চালু করা গেলে এখন যে পরিমাণ পণ্য নিয়ে ট্রেন ভারত থেকে আসছে, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আসবে। এতে পণ্য খালাস ও সংরক্ষণ সহজ হবে। ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন, সরকারও বেশি রাজস্ব পাবে।’

নদীপথে ভারত থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সুলতানগঞ্জ পদ্মা নদীতে নৌবন্দর করতে চায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সংস্থাটির চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক গোদাগাড়ীর সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শনও করেছেন।

বিআইডব্লিউটিএ-সূত্রে জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ পদ্মা নদীর এ পথে বাণিজ্য চালুর বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা এখন নৌপথটির অবকাঠামো পর্যালোচনা করছেন। তাঁরা বলেন, এ নৌপথটি চালু হলে ভারতের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য যোগাযোগ আরও সহজতর হবে। কেননা নৌপথে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যায়।

রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘রাজশাহী থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটারের একটি নৌপথের অনুমোদন থাকলেও তা কার্যকর নেই। এখন নতুন পথটি সংক্ষিপ্ত করে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদের মায়া নৌবন্দর পর্যন্ত পণ্য চলাচলের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।’ এটি যাতে দ্রুত সম্ভব হয় সেজন্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে তিনি কথা বলছেন।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকু জানান, তাঁরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থ বিবেচনায় কার্গো বিমান চালু, রেলপথের উন্নয়নের পাশাপাশি নৌপথটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। এগুলো চালু করা গেলে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়বে।

সর্বশেষ খবর