বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের চাহিদা দেশজুড়ে

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের চাহিদা দেশজুড়ে

বগুড়ার আকাশ এখন মেঘলা। ঈদে সাদা সেমাইয়ের প্রচুর চাহিদা থাকে বলে কড়া রোদ না থাকলেও রাত-দিন শ্রম দিয়ে সাদা সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয় সাদা সেমাই পল্লীর কারিগরদের। একটুও দম ফেলারও ফুরসত নেই। বগুড়ায় তৈরি সাদা সেমাই ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে চাহিদা। তাই চাহিদামতো সাদা সেমাই সরবরাহ করতে কারিগররা কাজ করে চলেছেন।

বগুড়ার রাজাবাজার ও ফতেহ আলী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদা সেমাই দেখতেই সাদা। দুই ধরনের সাদা সেমাইয়ের মধ্যে একটি সুতার মতো চিকন এবং অন্যটি তুলনামূলক মোটা। এই দুই ধরনের সেমাই তৈরি এবং বিক্রি হয়ে থাকে। খোলা বাজারে সেমাই দুটি বিক্রি হচ্ছে প্রায় একই দামে। বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে ময়দা দিয়ে তৈরি সাদা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি, আবার সাদা সেমাই ভেজে প্যাকেট আকারে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজিতে।

জানা যায়, বগুড়া জেলায় কমপক্ষে তিন শতাধিক কারখানায় সাদা চিকন সেমাই তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে বগুড়া শহরের মাদলা, বেজোড়া, ঢাকন্তা, শ্যাওলাকান্দি, বনানী, সুলতানগঞ্জপাড়া, চেলোপাড়া, নারুলী, নুরানী মোড়ে বৃন্দাবনপাড়ায়। কেউ কেউ কারখানা খুলে আবার কেউ কেউ নিজ বাড়িতে সেমাই তৈরি ও প্যাকেটজাত করেন। তবে তাদের বেশির ভাগই  মৌসুমি ব্যবসায়ী। পুরো রমজান মাস এবং ঈদুল আজহার সময় সেমাই তৈরি ও বিক্রি শেষে তারা তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেন।

 আবার অনেকেই সারা বছর কারখানায় সেমাই তৈরি ও বিক্রি করে থাকেন। এদের মধ্যে বগুড়া শহরের অর্ধশতাধিক বেকারি ও হোটেল রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ সারা বছর সাদা সেমাই  তৈরি করে থাকে।

বগুড়া শহরের রাজাবাজার এলাকার সাদা সেমাই তৈরিকারী নিতাই রায় জানান, সময়মতো কারিগর পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলে বেশি দামে শ্রমিক রাখতে হয়। ময়দার দাম বেড়েছে। রোদ না থাকলে সাদা সেমাই শুকানো যায় না। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে লোডশেডিং। এসব কারণেই সাদা সেমাইয়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। তিনি জানান, বগুড়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ, নওগাঁ, নাটোর, ঢাকা, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, সৈয়দপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সাদা সেমাই সরবরাহ হয়ে থাকে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো কুরিয়ারের মাধ্যমে সেমাই পৌঁছানো হয়। দামের বিষয়টি হচ্ছে শুকানো এবং সেমাইয়ের গুণাগুণের ওপর।

বগুড়া শহরের ঢাকন্তা গ্রামের সেমাই শ্রমিক মোজাহার আলী আকন্দ জানান, ময়দা পেস্ট করে মেশিনের মাধ্যমে সেমাই তৈরি করা হয়। মেশিন থেকে বের হওয়া সাদা সেমাই প্রথমে ভিজা থাকে। ভিজা সেমাইকে হাতের সাহায্যে একটি চিকন কাঠির সঙ্গে ঢেউ তোলার মতো করে দুই ভাঁজ দিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর এটি বাজারজাত করা হয়। রান্নার সময় একটু ভেজে নিতে হয়। তিনি আরও জানান, এক বস্তায় ময়দা থাকে ৭৪ কেজি। আর সেমাই পাওয়া যায় ৬৯ থেকে ৭০ কেজি। রোদ থাকলে প্রতিদিন ২৮০ কেজি থেকে সাড়ে ৩০০ কেজি সেমাই তৈরি করা যায়।

বগুড়া শহরের রওশন আলী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুজ্জামান আরিফ জানান, তারা সেমাই ও লাচ্ছা সেমাই তৈরি করে উত্তরাঞ্চলের সব জেলায় সরবরাহ করছেন। ঈদের আগে সেমাইয়ের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এ সময় শ্রমিকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে অর্ডার পরিপূর্ণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। 

বগুড়ার বেজোড়া এলাকার সেমাই কারখানার মালিক আবদুর রশীদ জানান, ঈদের আগে সাদা সেমাইয়ের চাহিদা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন সাদা সেমাই নিতে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পার্সেল করে পাঠাতে হয়। তিনি জানান, সিলেট, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের কিছু সেমাই পাঠানো শুরু হয়েছে রোজার শুরু থেকে। চলতি বছর ২৫ কেজি ওজনের এক খাচি সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা করে। ভালোমানের সেমাই পাইকারি বাজারে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দাম পড়ছে। আর খুচরা বাজারে ভালো মানের সাদা সেমাই দাম পড়বে ৬০ টাকা কেজি।

সর্বশেষ খবর