সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

আহত মেঘলা ও লতিফের কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস দেখার কেউ নেই

সাভার ট্র্যাজেডি

নজরুল মৃধা, রংপুর

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির নয় বছর পেরিয়ে গেল। সেদিনের ঘটনায় আহতরা কেমন আছেন এখন আর সেই খোঁজ কেউ রাখেন না। সেদিনের ঘটনায় আহত মেঘলা বেগম ও আবদুল লতিফদের মতো অনেকের নীরব দীর্ঘশ্বাস কারও নজরে আসছে না। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড় হযরতপুর গ্রামের মেঘলা বেগম স্বামী আবদুল বাতেনসহ কাজ করতেন রানা প্লাজায়। রানা প্লাজা ভবন দুর্ঘটনায় স্বামী আবদুল বাতেনের প্রাণ হারায়। মেঘলাকে করে দেয় গুরুতর আহত। সারা শরীরে এখনো অসংখ্য জখমের দাগ। ক্ষতিপূরণের যে কয়টি টাকা পেয়েছিলেন তা দিয়ে চিকিৎসায় শেষ হয়ে গেছে। বছর তিনেক আগে নতুন করে ঘর করার স্বপ্নে একই গ্রামের নুরুল ইসলাম নামে একজনকে বিয়ে করেছিলেন। কন্যার বয়স যখন দুই মাস স্বামী নুরুল ইসলাম তাকে তালাক দিয়ে ঢাকায় চলে যায়। দুই বছরের সন্তান সুমাইয়াকে নিয়ে মেঘলা এখন বাবার বাড়িতে বোঝা হয়ে অবস্থান করছেন। মুঠোফোনে কথা হলে মেঘলা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, যেদিন দুর্ঘটনা হয় তার একদিন পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ওই অবস্থায় স্বামীর লাশ দাফন করতে মিঠাপুকুরে এসেছেন।  তিনি বলেন, সেদিন মরে যাওয়াই ভালো ছিল। বেঁচে থাকার এত যন্ত্রণা সহ্য হয় না। শিশু বাচ্চার খাবার জোগাড় করা এখন সবচেয়ে বড় কষ্টের। মেঘলা বলেন, প্রথম প্রথম সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষ খোঁজখবর নিলেও এখন কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। বাবার বাড়িতে বাড়তি বোঝা হয়ে জীবন কাটাচ্ছি। সাভারের ভবনধসে আরেক আহত মিঠাপুকুরের নারায়ণপুর গ্রামের আবদুল লতিফ। সরকারি সাহায্য হিসেবে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। তা চিকিৎসাতেই শেষ হয়ে গেছে। তারপরেও তিনি জীবন-সংগ্রমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। তবে আর্থিক সংগতি না থাকায় তা করতে পারছেন না। রানা প্লাজা ধসে আহত হওয়ায় এতদিন বিয়ে করতে পারেননি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, কয়েক বছর আগে এক জনপ্রতিনিধি একটি গাভী দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আর আসেননি। এ ছাড়া গত নয় বছরে কেউ তার খোঁজ নেননি। তিনি বলেন, সেদিন আহত হয়ে বেঁচে যাওয়াটাই মনে হয় ভুল ছিল। তিনি বলেন, সেদিনের আহতদের মধ্যে অনেকেই আবার সুস্থ হয়ে ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করছেন। আহত অনেকেই সেদিনের দুর্ঘটনার ধকল সামলে নিয়ে জীবন-সংগ্রামে আবারও ঘুর দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তিনি এখনো বেকার। ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সাভার ট্র্যাজেডি কেড়ে নিয়েছে রংপুরের অর্ধ শতাধিক তাজা প্রাণ। এদের মধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার মতিয়ারের স্ত্রী দুলালী বেগম, বাদশা মিয়ার কন্যা লাইজু ওরফে রাবেয়া, সোহরাব হোসেনের কন্যা আরজিনা বেগম, আবুল কাশেমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগম, হামিদা বেগম, সুজন মিয়ার পুত্র বুলু মিয়া, মৃত ইউসুফ আলীর পুত্র নেওয়াজ শরিফ, নেহজুল ইসলামের স্ত্রী শ্যামলী বেগম, আনছার আলীর পুত্র মোরশেদুল ইসলাম প্রমুখ।

 ইউসুফ আলীর পুত্র শফিকুল ইসলাম, সবুজ মিয়ার স্ত্রী রাবেয়া আক্তার, জাহেদুলের স্ত্রী মোহছিনা বেগম, শওকত আলীর কন্যা লিপি খাতুন, আয়নাল হকের স্ত্রী গোলাপী বেগমসহ অনেকেই সেদিন রানা প্লাজা ধসে জীবন হারিয়েছিলেন। আহত হয়েছিল অনেকেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর