বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা
সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের বৈঠক

বাংলাদেশ থেকে আরও শান্তিরক্ষী নিয়োগের আগ্রহ

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে জাতিসংঘ সদর দফতরে একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এ সময় ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশিসংখ্যক শান্তিরক্ষী নিয়োগের আগ্রহের কথা জানান তাঁরা। ২৫ ও ২৬ এপ্রিল নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দফতর পরিদর্শনকালে জাতিসংঘের সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি বিভাগের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল গিলেজ মিচাউদ, ভারপ্রাপ্ত মিলিটারি অ্যাডভাইজার মেজর জেনারেল মওরিন ও’ব্রায়ান, পলিটিক্যাল ও পিস বিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স বিভাগের অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল (এএসজি) মোহাম্মদ খালেদ খিয়ারি, অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান স্যান্ডার্স ও পুলিশ অ্যাডভাইজার লুইস রিবেরিও ক্যারিলহোর সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। অত্যন্ত ফলপ্রসূ এসব বৈঠকে উঠে আসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দীর্ঘ সময়ব্যাপী বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের নানা দিক। বৈঠককালে সেনাপ্রধান বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক অঙ্গীকারের কথা তুলে ধরেন। শান্তিরক্ষী মিশনগুলোয় নারী শান্তিরক্ষীসহ আরও অধিক বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিয়োগ, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশ থেকে নিয়োগ, অন্যান্য শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশের সঙ্গে যৌথভাবে শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ, বাংলাদেশ থেকে আর্মড পারসোনেল ক্যারিয়ার মোতায়েন, গার্ড ইউনিটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মিশনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নিয়োগ, জাতিসংঘ সদর দফতরের সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি এবং অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বাংলাদেশ থেকে আরও অধিকসংখ্যক পুলিশ কন্টিনজেন্ট ও ইনডিভিজুয়াল পুলিশ অফিসার (আইপিও) নিয়োগের আহ্বান জানান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের অত্যন্ত কঠোর নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মনোনীত করে উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে মিশনে পাঠানো হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত মিলিটারি অ্যাডভাইজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের পেশাদারি, নৈতিকতা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রশংসা করে বলেন, এসব কারণেই বিশ্বশান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশিসংখ্যক শান্তিরক্ষী নিয়োগের আগ্রহের কথা জানান তিনি।

এএসজি খালেদ খিয়ারি পিস বিল্ডিং কমিশন ও পিসকিপিংয়ে বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

এ ছাড়া এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণ এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয়দানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।

আলোচনাকালে ভারপ্রাপ্ত মিলিটারি অ্যাডভাইজার এবং পলিটিক্যাল ও পিস বিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স বিভাগের এএসজি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে একটি অ্যাভিয়েশন কন্টিনজেন্ট জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যথাশিগগিরই মোতায়েনের অনুরোধ জানালে সেনাপ্রধান তাতে নীতিগত সম্মতি দেন।

শান্তিরক্ষী মিশনের বাংলাদেশি কন্টিনজেন্টগুলোয় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি পরিবর্তন করে বাংলাদেশ থেকে নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি প্রতিস্থাপন করার জন্য সেনাবাহিনী প্রধান প্রস্তাব করলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে সম্মতি প্রকাশ করেন। এর ফলে দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এ বিষয়টির সমাধান হতে যাচ্ছে যা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সক্ষমতা, সুরক্ষা ও মনোবল বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এএসজি ক্রিশ্চিয়ান স্যান্ডার্স বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের পেশাগত দক্ষতা ও লজিস্টিক সক্ষমতার প্রশংসা করেন। তিনি বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশি হেলিকপ্টার কন্টিনজেন্ট নিয়োগসহ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী অন্য দেশগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

পুলিশ অ্যাডভাইজার লুইস রিবেরিও ক্যারিলহো শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত বাংলাদেশি পুলিশ সদস্যদের প্রসংশা করেন এবং আরও অধিক বাংলাদেশি পুলিশ সদস্য নিয়োগের আগ্রহের কথা জানান।

জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর নামে স্থাপিত বেঞ্চ ও রোপণ করা বৃক্ষ-হানি লুকাস্ট পরিদর্শন করেন সেনাবাহিনী প্রধান।

সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ২৬ এপ্রিল রাতেই সেনাপ্রধান ঢাকার উদ্দেশে জেএফকে এয়ারপোর্ট ত্যাগ করেন।

সর্বশেষ খবর