মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা
বরিশাল

গরু কাগজে আছে খামারে নেই

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশালে এবার কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ১ লাখ ৭ হাজার। জেলার ৬ হাজার খামারে প্রায় ১ লাখ পশু আছে দাবি প্রাণিসম্পদ বিভাগের। সে হিসেবে ৭ হাজার পশুর ঘাটতি নিয়ে শুরু হচ্ছে এবারের কোরবানির বাজার। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী পশু নেই খামারিদের কাছে। যাচাই ছাড়াই মনগড়া তথ্য দিয়ে কোরবানির বাজারের পশুর হিসাব কষছেন তারা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে পালন করা পশু ছাড়াও অন্য এলাকা থেকে আনা পশু দিয়ে এবারের কোরবানির বাজারের চাহিদা পূরণ করার প্রত্যাশা কর্তৃপক্ষের। পশুখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার গত বছরের চেয়ে কোরবানির পশুর দাম ৫ থেকে ১০ ভাগ বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন তারা। রাসায়নিক দিয়ে পশু মোটাতাজাকরণের বিরুদ্ধে কোরবানির ছয় মাস আগে থেকে নজরদারি করার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। জানা যায়, গত বছর বরিশালে ১ লাখ ৭ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়। বিক্রীত ওই সংখ্যাকে এবারের চাহিদা হিসেবে ধরেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। বরিশালে প্রতিষ্ঠিত বড় কোম্পানির পশুর খামার রয়েছে রহমতপুরে এমইপি অ্যাগ্রো, কাশীপুরে কেমিস্ট অ্যাগ্রো বায়োটেক ও সদর উপজেলার কড়াপুরে অ্যাংকর অ্যাগ্রো। তাদের হিসাবে এগুলোসহ ব্যক্তি পর্যায়ে জেলার প্রায় ৬ হাজার খামারে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ১ লাখ। একমাত্র দুম্বার খামারেও রয়েছে অর্ধশতাধিক দুম্বা। সে হিসেবে জেলায় কোরবানির পশুর ঘাটতি রয়েছে ৭ হাজার। তবে প্রকৃত ঘাটতি আরও বাড়তে পারে। কারণ প্রাণিসম্পদ বিভাগের খামারির তালিকায় থাকা অনেকেই এবার পশু পালন করেননি। তাদের একজন সদর উপজেলার পশুরকাঠি এলাকার ক্ষুদ্র খামারি জলিল খলিফা। গত বছর কোরবানিতে নিজের পালিত দুটি ষাঁড় বিক্রি করেছিলেন তিনি। গরুর বাছুরের দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পশুখাদ্যের অপ্রতুলতা ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে এবার তার খামার পশুশূন্য। একই উপজেলার আইচা এলাকার নজরুল ইসলামও গত বছর চারটি ষাঁড় কোরবানির বাজারে বিক্রি করেছিলেন।

এবারের কোরবানিতে বিক্রি করার জন্য তার খামারে কোনো পশু নেই। নজরুল জানান, পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং বাজারে সরবরাহের অপ্রতুলতার কারণে এবার তিনিসহ অনেক ক্ষুদ্র খামারি কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করেননি লোকসানের আশঙ্কায়।

পশুরকাঠির আরেক ক্ষুদ্র খামারি আবদুল হালিম নেগাবান নয় মাস ধরে দুটি ষাঁড় পালন করছেন কোরবানির বাজারের জন্য। ১ লাখ ৩ হাজার টাকায় কেনা বাছুর দুটি পালনে প্রতি মাসে ৪৮ টাকা কেজি দরের গমের ভুসি, ৫৫ টাকা কেজির খইল, ৫২ টাকা কেজির মিক্স ফিডম খরকুটাসহ অন্যান্য খাবার খাওয়াতে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। শ্রম দেন নিজেই। আসন্ন কোরবানিতে ১ লাখ ৮৫ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকায় ষাঁড় দুটি বিক্রি করে সামান্য লাভের আশা করছেন। খাদ্যসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার পশুর বাজার চড়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল আলম জানান, তালিকাভুক্ত খামারির অনেকে এবার কোরবানির বাজারের জন্য পশু পালন করছেন না এটা তিনি জানতেন না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাছে হালনাগাদ তালিকা চাইবেন। তালিকাভুক্ত খামারি ছাড়াও ব্যক্তিপর্যায়ে অনেকে পশু পালন করছেন। এসব পশু কোরবানির বাজারে আসবে। এর বাইরেও অন্য এলাকা থেকে বরিশালের কোরবানির বাজারে কিছু পশু আসবে। এতে ঘাটতি মিটে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর