রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

১১ বছর কমিটি নেই ছাত্রলীগের

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

রাহাত খান, বরিশাল

১১ বছর কমিটি নেই ছাত্রলীগের

বামপন্থি-ডানপন্থি-ইসলামীসহ সব ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় কর্মকান্ড এবং কমিটি রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ১১ বছরেও কমিটি হয়নি ছাত্রলীগের। কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগের পরিচয়ে ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ানোসহ প্রায়ই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ-সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছেন তারা। কমিটিহীন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সুযোগে ক্যাম্পাসে অবস্থান পাকাপোক্ত করছে ছাত্রদল, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন বাম ও ডানপন্থি ছাত্র সংগঠন। প্রকাশ্যে কার্যক্রম না থাকলেও ভিতরে সক্রিয় ছাত্রশিবিরও। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়টি প্রক্টর অফিসকে জানাতে হয় বলে জানিয়েছেন প্রক্টর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম জানান, কোনো ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়ে প্রক্টর কার্যালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করেনি। তবে প্রক্টর অফিস মৌখিকভাবে খোঁজখবর নিয়েছে। ক্যাম্পাসে বর্তমানে ছাত্রদল, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়ন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন বাম ও ডানপন্থি ছাত্র সংগঠনের কাঠামো এবং অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ছাত্রলীগের কাঠামো না থাকলেও তাদের তৎপরতা আছে। স্বার্থের দ্বন্দ্বে তারা বিভক্ত। শিবিরের কার্যক্রম না থাকলেও তাদের মতাদর্শী কেউ ক্যাম্পাসে থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর পর আজ পর্যন্ত ছাত্রলীগ নামধারী ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের নজির নেই। ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও তাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রায়ই দেখা যায়। সবশেষ গত ৫ জুলাই গভীর রাতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের বিবদমান মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত এবং অমিত হাসান রক্তিম গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে সিফাতসহ তার তিন অনুসারী রুম্মান, শান্ত, তমাল এবং অমিত হাসানের অনুসারী সাব্বির, সাইদুর রহমান ও সামির গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই ঘটনার জের ধরে ক্যাম্পাসে মুখোমুখি অবস্থানে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা। এক পক্ষের চার শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগের ইরাজ রব্বানী, রসায়ন বিভাগের সাইমুন ইসলাম, বাংলা বিভাগের সাব্বির হোসেন ও লোকপ্রশাসন বিভাগের রাব্বি খান  নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। নিরাপত্তা চাওয়া চার শিক্ষার্থী তাদের আবেদনে বলেছেন- গত ২০ জুলাই থেকে বেশ কিছুদিন ধরে মহিউদ্দিন আহমেদ সিফাত তার অনুসারীদের নিয়ে তাদের (অভিযোগকারীদের) ক্যাম্পাসে খোঁজাখুঁজি করছে। এতে তাদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা নষ্ট হচ্ছে, এমনকি ক্যাম্পাসে অবস্থান করাও তাদের জন্য ভীতিকর। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ বিষয়ে অমিত হাসান রক্তিম বলেন, ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার দিন প্রতিপক্ষ গ্রুপ বহিরাগতদের নিয়ে বড় হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা হামলার সুযোগ খুঁজছে। এ কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চার শিক্ষার্থী।  এ বিষয়ে মহিউদ্দিন সিফাত বলেন, প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাকে বিতর্কিত করতে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। তারা ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ক্যাম্পাসের শান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পাঁয়তারা করছেন তারা। সিফাত গ্রুপ সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহর এবং রক্তিম গ্রুপ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপির অনুসারী। এ কারণে বিবদমান দুই পক্ষের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। তবে চার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট বিএমপির বন্দর থানায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম। কারও নিরাপত্তার শঙ্কা থাকলে তাকে কর্তৃপক্ষের বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর