বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

ডিমও এখন নাগালের বাইরে

রংপুরে পাঁচ কারণে বেড়েছে দাম, রাজশাহীতে কারণ ছাড়াই

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর ও রাজশাহী

ডিমও এখন নাগালের বাইরে

রংপুরে ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে পাঁচ কারণে। খাদ্য ও শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম ও চিকিৎসা ঠিকমতো দিতে না পারায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়েইে চলেছে। ফলে খামারিরা উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছেন না। রংপুর পোলট্রি মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলায় ডিম উপাদনের প্রান্তিক খামার রয়েছে প্রায় ১০০ এবং মাংস উৎপাদনের খামার ৯০০-এর ওপর। এ ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল খামার রয়েছে ৩-৪টি। খামারিরা জানান, আগে ১টি ডিম উৎপাদনে খরচ হতো ৫ টাকা ৭০ পয়সা। বর্তমানে ৮ টাকা ৭০ পয়সা। খামারিরা পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করছেন ১০ টাকা ৭০ পয়সা আর ভোক্তারা কিনছেন ১২ থেকে ১৩ টাকায়। এ ছাড়া আগে পাকিস্তানি কক মুরগির উৎপাদন খরচ ছিল ১৬০ টাকা। বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ছিল ১১০ টাকা, যা বেড়ে হয়েছে ১৬০ টাকা। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি পেয়ে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে প্রতি কেজি মুরগির দাম গত কয়েক দিনের তুলনায় ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া ডিমের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। রংপুর জেলায় প্রতিদিন ডিমের চাহিদা রয়েছে ১৫ লাখ পিস। উৎপাদন হচ্ছে ১০ লাখ পিসের কিছু ওপরে। এর মধ্যে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন করছেন ৩ লাখ পিস আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পর্যায়ে ৭ লাখ পিসের বেশি। এদিকে দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জেলা পোলট্রি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আকবর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আরমানুর রহমান লিংকন জানান, গত এক বছরে মুরগির খাদ্যের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়েছে।

কারণ ছাড়াই বাড়ছে ডিমের দাম : গত এক সপ্তাহে বাড়েনি পোলট্রি খাবার ও ওষুধের দাম। সরবরাহ আগের মতোই। তার পরও প্রতিদিন রাজশাহীতে বাড়ছে ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমে বেড়েছে ৩ টাকা। রাজশাহী থেকে সারা দেশে সরবরাহ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করা প্রতিষ্ঠান ডিম আড়ত সমিতির দাবি, বাস্তবতার কারণেই এ বৃদ্ধি। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমে দাম বেড়েছে ৩ টাকা। খুচরা পর্যায়ে বেড়ে প্রতি হালি ব্রয়লার সাদা ৪৪, লাল ৪৮, দেশি হাঁস ও মুরগি ৬৫, কোয়েল ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, এখানেই শেষ নয়।

সারা দেশে ডিমের দর কত হবে তা নির্ধারিত হয় রাজশাহী, ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে। রাজশাহীর নিয়ন্ত্রক মোসলেমের মোড়ের ডিম আড়ত সমিতি। সংগঠনের দাবি, পোলট্রি খাবার ও ওষুধের দাম বৃদ্ধি, সরবরাহ কম, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন কমে যাওয়ায় বাড়ছে দাম। ডিম আড়ত সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদিন জানান, তাঁদের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ আছে। সবাই মিলে একটা দাম নির্ধারণ করেন। রাজশাহী পোলট্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশন পরিচালনা পর্ষদের প্রধান কামাল হোসেন জানান, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, মুরগির খামারের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। বড় খামারগুলো উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এখন যে অবস্থা তাতে এ ব্যবসায় টিকে থাকা কষ্টকর বলে মত তাঁর।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে বাড়েনি মুরগির খাবারের দাম। ডিম উৎপাদনের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহও আগের মতোই। রাজশাহীর নাবা ফার্ম লিমিটেডের স্টোর সুপারভাইজার হাসান আলী জানান, তাদের উৎপাদন প্রতিদিন গড়ে ২ লাখ ডিম, সবই বাজারে ছাড়া হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে এ অঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ কোটি বেশি ডিম উৎপাদন হয়। তবে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত থাকে না বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জুলফিকার মো. আখতার হোসেন। রাজশাহীতে গেল বছর ডিম উৎপাদন হয়েছে ৫৮ কোটি। এর মধ্যে প্রতিদিন মোসলেমের মোড় থেকে সারা দেশে পাঠানো হয় ১২ লাখ।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর