অবশেষে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আসছেন সিলেটের আবাসিক খাতে গ্যাস ব্যবহারকারীরা। সিলেট মহানগরী ও সদর উপজেলার ৫০ হাজার চুলার গ্যাস লাইনে প্রিপেইড মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চায়না কোম্পানি দি কনসোর্টিয়াম অব জেনার মিটারিং টেকনোলজি (সাংহাই) লিমিটেড ও হেক্সিং ইলেকট্রিকেল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করেছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল)। প্রিপেইড মিটার বসানোর পর গ্যাসের অপচয় কমবে। সাশ্রয় হবে ৩০-৪০ ভাগ গ্যাস। পাশাপাশি গ্রাহকদের আগের তুলনায় কম বিলও পরিশোধ করতে হবে- বলছেন সংশ্লিষ্টরা। জালালাবাদ গ্যাস সূত্র জানায়, বর্তমানে কোম্পানির গ্রাহক সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ৪৫৯। এর মধ্যে আবাসিক বা গৃহস্থালির কাজে সংযোগ (চুলা) রয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৭৫টি। বাকি ১ হাজার ৬৮৪টি গ্রাহক সংযোগ রয়েছে বিভিন্ন শিল্প, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রেস্টুরেন্ট, চা বাগান ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে সিলেট মহানগরী ও সদর উপজেলায় রয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার সংযোগ। প্রথম পর্যায়ে এর মধ্য থেকে ৫০ হাজার সংযোগ প্রিপেইড মিটারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, গ্যাসের অপচয় রোধে সিলেটে আবাসিক সংযোগে প্রিপেইড মিটার বসানোর লক্ষ্যে ২০১৯ সালে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১১৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যাচাই-বাছাই শেষে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথম পর্যায়ের ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয় ১২০ কোটি টাকা।
সূত্র আরও জানায়, গ্যাস ব্যবহারে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় অনেকে বিনা প্রয়োজনে সারা দিন গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। এতে গ্যাসের অপচয়ের পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটে। এ ছাড়া বারবার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক সচেতন গ্রাহকের গ্যাস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েও বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। প্রিপেইড মিটার চালু হলে এসব গ্রাহকের গ্যাস বিলও কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, প্রিপেইড মিটার স্থাপন নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর চীনা প্রতিষ্ঠান দি কনসোর্টিয়াম অব জেনার মিটারিং টেকনোলজি (সাংহাই) লিমিটেড ও হেক্সিং ইলেকট্রিকেল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান দুটি আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেট মহানগরী ও সদর উপজেলার ৫০ হাজার সংযোগ প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার কাজ করবে।চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জালালাবাদ গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী শোয়েব আহমদ মতিন বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ৫০ হাজার গ্রাহক উপকৃত হবেন।
হেক্সিং ইলেকট্রিকেলের রিজিওনাল সিইও লিও জু জানান, প্রিপেইড মিটার স্থাপন কাজের ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্প পরিচালক লিটন নন্দী জানান, আবাসিকে গ্যাসের অপচয় রোধ এবং গ্রাহকদের বিল সাশ্রয়ে মূলত এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা সিলেট নগরীর হাউজিং এস্টেট ও উপশহর এলাকায় প্রিপেইড মিটার স্থাপন করবেন। এ বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে এ দুটি স্থানে মিটার স্থাপন করা হবে। এ দুটি স্থানে পাইলটিংয়ের পর নগরীতে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে বৃহৎ আকারে মিটার স্থাপনের কাজে হাত দেওয়া হবে।