শুক্রবার, ৪ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যর্থ হতে পারে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

সরকারি দামের চেয়ে উৎপাদন খরচ বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

ব্যর্থ হতে পারে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

উৎপাদন খরচের চেয়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম কম হওয়ায় এবারও ব্যর্থ হতে পারে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান। কারণ সরকারি মূল্যে ধান-চাল গোডাউনে বিক্রি করলে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের উৎপাদন খরচ উঠবে না বলে মনে করছেন রংপুরের ব্যবসায়ীরা। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মতে, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমির ধান সরকারি মূল্য ১০ হাজার টাকার কিছু ওপরে। সরকারি মূলে ধান বিক্রি করলে কৃষকদের বিঘাপ্রতি লোকসান হবে ১ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে। অপরদিকে চাল ব্যবসীয়দের  প্রতি কেজিতে ক্ষতি হবে ৫ থেকে ৬ টাকা। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যানি ইউনিয়নের চাষি নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ধান উৎপাদন করতে খরচ হয় ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে জমির আইল কাটা বাবদ ৫০০ টাকা, জমি চাষে ১৫০০ টাকা, রোপণ বাবদ ২ হাজার ১০০ টাকা, নিড়ানি বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকা, সার ৭০০-৮০০ টাকা, কীটনাশক স্প্রে ১২০০-১৩০০ টাকা, ধান কাটা-মাড়াই ৪ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। সবমিলে এক বিঘা জমিতে খরচ হয় কৃষকের ১২ হাজার টাকার ওপর। এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন হয় ৮-৯ মণের মতো। সরকার এবার ধান ক্রয় করবে ২৮ টাকা কেজি হিসেবে।

সরকারি মূল্য অনুয়ায়ী, এক বিঘা জমির ধানের মূল্য হয় ১০ হাজার ১০০ টাকার মতো। সরকারি মূল্যে গোডাউনে ধান দিয়ে কৃষকদের উৎপাদনের ব্যয়ও উঠবে না। উৎপাদন খরচের চেয়ে বিঘায় প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা কম পাবেন কৃষকরা।

অপরদিকে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার চালের মূল্য ধরেছে ৪২ টাকা কেজি দরে। অথচ এক কেজি চাল উৎপাদনে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের খরচ পড়ে ৪৫-৪৬ টাকা। এছাড়া বর্তমানে বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। বাজার দরের চেয়ে ৭-৮ টাকা কম সরকারি মূল্য হওয়ায় কোনো ব্যবসায়ী চাল দিতে আগ্রহী হবে না।

রংপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম বলেন, সরকারি দরের তুলনায় ব্যবসায়ীদের চালের উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ৫-৬ টাকা বেশি। তাই অনেক ব্যবসায়ী সরকারি দামে চাল সরবরাহ করতে পারবে না। তিনি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন। 

গত আমন ও বোরো মৌসুমে কৃষক ও মিলাররা ধান সরবরাহে আগ্রহ না দেখায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান অনেকাটাই ব্যর্থ হয়েছে রংপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে। এছাড়াও মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার বিষয়ে রংপুর খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও হয়রানির ফলে গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহের কারণ বলে বেশ কয়েকজন কৃষক ও ব্যবসায়ী দাবি করেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর