বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দুর্যোগ ঝুঁকিতে উপকূলের শিশুরা

শিশুদের সুরক্ষায় নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

দুর্যোগ ঝুঁকিতে উপকূলের শিশুরা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খুলনার উপকূলীয় এলাকার শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে দুর্যোগে বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের নষ্ট হওয়ায় জীবন-জীবিকা হারিয়ে অনেকে শহরের বস্তিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এতে শিশুরা পরিচিত আবাসস্থল হারিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেড়ে উঠছে। ব্যাহত হচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন। অনেকেই বাধ্য হয়ে শিশুশ্রমে যুক্ত হচ্ছে। বাল্যবিয়ের শিকার হয় কিশোরীরা। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হয় না। এসব কারণে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধসহ শিশুদের সুরক্ষায় নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিশ্লেষক ও ভুক্তভোগী শিশুরা। গতকাল খুলনা মহানগরীর রূপসা কারিতাস মিলনায়তনে দ্বিতীয় উপকূলীয় শিশুদের জলবায়ু সম্মেলনে এসব দাবির কথা জানানো হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগ্রত যুব সংঘ-জেজেএস এর আয়োজন করে। এতে শিশুদের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবিনামা পেশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- উপকূলীয় দুর্গত শিশুদের সুরক্ষায় সরকারি-বেসরকারি দফতরের পদক্ষেপ নেওয়া এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরিকল্পনায় শিশুদের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া, শিশুদের শিক্ষা ও বিনোদন ব্যাহত হওয়ায় তাদের স্বাভাবিক বিকাশে নজর দেওয়া, শিশুবান্ধব আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি, উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় বিশেষ বরাদ্দ, লবণাক্ততা থেকে জীবন-জীবিকা রক্ষা। নারীর মানবাধিকার ও লিঙ্গসমতাবিষয়ক বিশ্লেষক মৌসুমী বিশ্বাস বলেন, সাইক্লোন শেল্টারে এক ধরনের যৌন শিকার হন মেয়েরা। গর্ভবতী মায়েরা নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। দুর্যোগের সময় বিভিন্ন ধরনের লোক সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়। তাদের সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাও যায় না। এ কারণে উপকূলে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার গড়ে তোলা জরুরি। এদিকে লবণপানিতে থাকায় উপকূলের মেয়েরা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন ও প্রতিকূল অবস্থার কারণে অনেকে পাচার হয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি করেন দুর্যোগ ফোরামের সদস্যসচিব নঈম ওয়ারা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও কর্মক্ষেত্রের অভাবে প্রতিদিনই মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্য শহর বা পাশের দেশে পাচার হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ২০১০ সাল থেকে কপ সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশসহ অনুন্নত দেশগুলো। কিন্তু কপ সম্মেলনে শুধু এটি আলোচনাই হয়, বাস্তবায়ন হয় না। সুতরাং এখন সময় এসেছে সম্মিলিতভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি ও ঝুঁকি কমিয়ে আনার চেষ্টা করার।

জেজেএসের নির্বাহী পরিচালক এ টি এম জাকির হোসেনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম, ইউনিসেফ খুলনার চিফ ফিল্ড অফিসার কাউসার হোসাইন, শাপলানীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমুকু উচাইয়ামা, কেএনএইচ বাংলাদেশের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর শুভময় হক ও কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গ্রেটা ফিটগ্যারাল্ড।

সর্বশেষ খবর