মঙ্গলবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

স্বীকৃতি মেলেনি জমিদাতাদের

নগর প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্তরা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

স্বীকৃতি মেলেনি জমিদাতাদের

সিলেট নগরীতে চলছে একের পর এক সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ। সড়কের জন্য কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন নগরবাসী। এ জন্য ভাঙা পড়ছে বাড়ি ও সীমানা প্রাচীর। এর পরও বৃহৎ স্বার্থে নগরবাসী হাসিমুখেই বিনামূল্যে ছেড়ে দিয়েছেন জমি। জনস্বার্থে কোটি টাকার জমি দিয়েও সিটি করপোরেশন থেকে ভূমিদাতা হিসেবে কোনো স্বীকৃতি পাননি তারা। কয়েকবার আশ্বাসের পরও রহস্যজনক কারণে সেই স্বীকৃতি আটকে আছে নগর ভবনে। ভূমিদাতাদের শঙ্কা সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য ভূমিদানের কোনো স্বীকৃতি কিংবা প্রমাণপত্র না থাকায় আবারও যে কোনো সময় নতুন করে জমি দিতে হতে পারে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ২০১৪ সালের জুন মাসে প্রথমবারের মতো সিলেট সিটি মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর তিনি নগরীর প্রধান ও পাড়া-মহল্লার সড়ক সম্প্রসারণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দেন। সড়ক সম্প্রসারণ ও ড্রেন প্রশস্ত করতে গিয়ে তিনি ভূমিদানে নগরবাসীর সহযোগিতা চান। উন্নয়নের স্বার্থে নগরবাসী বিনামূল্যে তাদের মূল্যবান জমি ছেড়ে দেন। কারও বাসাবাড়ি, সীমানা প্রাচীর, আবার কারও দোকানপাট ভেঙে শুরু হয় উন্নয়ন কাজ। রাস্তা ও ড্রেনের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে গিয়ে অনেকে কোটি কোটি টাকার ভূমি দান করেন। এ জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আর্থিক মূল্য পরিশোধ করা হয়নি। তবে শুরু থেকে ভূমিদাতা নগরবাসী তাদের এ অবদানের স্বীকৃতি দাবি করে আসছিলেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বিভিন্ন সময় ভূমিদাতাদের সংবর্ধনা ও স্বীকৃতি হিসেবে প্রশংসাপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।  দুই মেয়াদের মেয়র হিসেবে বিভিন্ন সময় বাজেট বক্তৃতায়ও তিনি প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দেন। কিন্তু গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। এতে ক্ষুব্ধ হন নগরবাসী। নগরবাসীর ধারণা, মেয়র নিজের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছেন। উন্নয়নের পর তিনি ভুলে গেছেন ভূমিদাতাদের।

সিলেট নগরীর একাধিক ভূমিদাতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়ক ও ড্রেন সম্প্রসারণের জন্য তারা কোটি কোটি টাকা মূল্যের জমি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ভূমিদানের কোনো স্বীকৃতি কিংবা প্রমাণপত্র নেই। তাই ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশন আবারও জায়গা ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে অতীতে ভূমিদানের কোনো রেকর্ড তারা দেখাতে পারবেন না। এ ছাড়া উন্নয়ন কাজে নিজেদের অবদানের কোনো স্বীকৃতি তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও রেখে যেতে পারছেন না।

সিলেট নগরীর কুমারপাড়ার বাসিন্দা সংস্কৃতিকর্মী খোয়াজ রহিম সবুজ জানান, ‘বিভিন্ন সময় নগরের উন্নয়নে জমি ছেড়ে দিয়েছি। এবার পাঁচ ফুট জমি ছাড়তে হয়েছে। তিনবারে অন্তত ১৫ ফুট জমি ছাড়তে হয়েছে, যা হিসাব করলে আড়াই ডিসিমেল হবে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ মেলেনি। এমনকি একটি কাগজও দেননি নগর সংশ্লিষ্টরা। এ এলাকায় এক শতক জমির দাম প্রায় ৫০ লাখ টাকা।’

২০১৯ সালে নগরের ধোপাদিঘীরপাড়ে কোটি টাকার জমি ছাড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের পরিবার। তখন বিষয়টি ফলাও করে প্রচার হলেও পরিবারটিও আক্ষরিক অর্থে লিখিত কোনো স্বীকৃতি পাননি। শুধু বাসার সীমানা প্রাচীরটি পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নগরবাসী অনেকটা স্বেচ্ছায় জমি ছেড়ে দিয়ে নগর উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করছেন। এ জন্য আমি ও সিসিক পর্ষদ নগরবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ।

ইতোমধ্যে প্রায় ২ হাজার ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা ও কৃতজ্ঞতাপত্র তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলো তাদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর