সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বর্ষা নিয়ে শীতেই টেনশন

জলাবদ্ধতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সিসিক ♦ ছড়া-খাল উদ্ধারে জোরেশোরে কাজ শুরুর পরিকল্পনা ♦ ছয় সদস্যের কমিটি গঠন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বর্ষা নিয়ে শীতেই টেনশন

বর্ষা শুরুর এখনো মাস ছয়েক বাকি। কিন্তু এর মধ্যেই বর্ষায় জলাবদ্ধতার টেনশন ভর করেছে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মাথায়। গতবার জলাবদ্ধায় যেভাবে নগরবাসীকে নাকাল হতে হয়েছে এবার সিসিক তার পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। এ জন্য বর্ষার টেনশনে শীতেই গলদঘর্ম নগরভবন। জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে প্রকৌশলী ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছড়া-খাল উদ্ধার ও ড্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ জোরেশোরে শুরুর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। গত বছরের ভোগান্তির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী বছর বর্ষায় জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখতে বেড়েছে নগরভবনে ব্যস্ততা। তবে এখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতার যেসব কারণ চিহ্নিত হয়েছে সেগুলো নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি সিসিক। বর্ষার আগে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা নিয়েও রয়েছে সংশয়। গত বছর সিলেটে আগেভাগেই শুরু হয়েছিল বৃষ্টিপাত। মার্চ ও জুনে দুই দফা জলাবদ্ধতা ও বন্যায় নগরবাসীকে নাকাল হতে হয়। বিশেষ করে সুরমা তীরবর্তী এলাকার লোকজনকে মাসজুড়ে এ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ওই সময় নগরভবনের পক্ষ থেকে জলাবদ্ধতার জন্য যেসব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছিল তার মধ্যে ছিল- সুরমা নদীর নাব্য হ্রাস, অতিবৃষ্টির কারণে নগরীর টিলাগুলো থেকে অতিমাত্রায় বালু এসে ছড়া-খাল ও ড্রেন ভরাট হয়ে যাওয়া, কাজ শেষে ঠিকাদারদের ড্রেনের মধ্যে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা এবং ড্রেন ও ছড়া-খালে নগরবাসী কর্তৃক ময়লা-আবর্জনা ফেলা। আগামী বর্ষা মৌসুমে যাতে এসব কারণে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সে জন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সিসিক। সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, সিলেট নগরীর উত্তরপ্রান্তে সারি সারি টিলা। চা বাগানবেষ্টিত টিলাগুলো থেকেই নগরীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া-খালগুলোর উৎপত্তি। অতিবৃষ্টি হলে এসব টিলা থেকে বালু এসে ছড়া-খাল ও ড্রেন ভরাট হয়ে যায়। এ জন্য গোয়ালীছড়া, মালনীছড়া ও কালীবাড়িছড়াসহ কয়েকটি ছড়ার উৎসমুখে পুকুরের মতো গভীর গর্ত খনন করতে চায় সিসিক। এতে ঢলের সঙ্গে আসা বালু পুকুরে জমা হবে এবং পানি ছড়া-খাল ও ড্রেন দিয়ে প্রবাহিত হবে। পরে এস্কাভেটর দিয়ে বালু অপসারণ করা যাবে। কিন্তু চা বাগানগুলো পুকুরের জন্য জায়গা দিতে অনীহা প্রকাশ করায় এখনো এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সুরমা নদীর নাব্য বৃদ্ধির কাজ শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী নূর আজিজুর রহমান জানান, সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড দরপত্র আহ্বান করে কার্যাদেশ দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, শিগগিরই কাজ শুরু হবে। নগরীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া-খাল দিয়ে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হবে। এতে অন্তত বন্যার হাত থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবেন। তবে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিসিক সুরমা নদী ও বড় খালগুলোর মিলনস্থলে স্লুইসগেট স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এখনই সম্ভব হচ্ছে না। নগরবাসী যাতে ছড়া-খাল ও ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে সে জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছে সিসিক- এমন তথ্য জানিয়ে নূর আজিজ বলেন, নির্ধারিত স্থানের বাইরে ময়লা-আবর্জনা ফেললে ২ লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের দন্ডের বিধান রয়েছে।

তবে সিটি করপোরেশন এত কঠোর না হলেও কেউ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।  সিসিক সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদকে আহ্বায়ক ও প্রকৌশলী আলী আকবরকে সদস্য সচিব করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ ওই কমিটি সিসিকের পরিচ্ছন্নতা শাখাকে নিয়ে বৈঠক করবে। এ ছাড়া কমিটির সদস্যরা নগরঘুরে জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজে বের করে এগুলোর সমাধানে সুপারিশ করবেন। এদিকে, ছড়া ও খালের ওপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নেমেছে সিটি করপোরেশন। গত ১২ জুন নগরীর সোবহানীঘাটে গোয়ালীছড়ার ওপর নির্মিত কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ ছাড়া বক্স ড্রেনের কয়েকটি স্থান ভেঙে জমে থাকা আবর্জনা অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর