মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সংসদে সুলতান মনসুর

দেশ মেরামত কি তারা ’৭৫-এর মতো ঘটনা ঘটিয়ে করতে চান

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর (গণফোরাম) জানতে চেয়েছেন, ‘যারা বাংলাদেশকে মেরামত করতে চান, তারা কি ’৭৫ সালের মতো ঘটনা ঘটিয়ে মেরামত করতে চান? তারা বলছেন, বাংলাদেশকে মেরামত করতে হবে। কাদের কাছ থেকে এ কথা শুনছি, ’৭৫ সালের খুনিদের কাছ থেকে। ডাকসুর এই সাবেক সহ-সভাপতি বলেন, আপনারা কি সেই মেরামত করতে চান, ১৯৭৫ সালের মতো ঘটনা ঘটিয়ে? সেই মেরামত করতে চান খুনি জিয়া যেভাবে পাকিস্তানের দালাল শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন? সুলতান মনসুর জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনাকালে গতকাল এসব প্রশ্ন তোলেন। আলোচনায় আরও অংশ নেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ ফারুক খান, মো. মোসলেম উদ্দিন, আবদুল মান্নান, মো. আনোয়ারুল আজীম (আনার), বেগম খাদিজাতুল আনোয়ার, জাফর আলম, বেগম রত্না আহমেদ, গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, মো. আক্তারুজ্জামান এবং স্বতন্ত্র সদস্য রেজাউল করিম বাবুল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতার পর সব বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ জাতিসংঘের সদস্য পদ অর্জন করেন। তা সম্ভব হয়েছে তার ক্যারিশমেটিক ও ডায়নামিক লিডারশিপের জন্য। তিনি তার কর্মে আমাদের জীবনে-মননে সোনার বাংলার স্বপ্ন বুনে দিয়ে গেছেন। তারই সুযোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ির দেশকে আজ একটি সম্ভাবনাময় অর্থনীতি, ভাইব্রেন্ট অর্থনীতি ও ল্যান্ড অব অপারচ্যুনিটির দেশ করে তুলেছেন। বহির্বিশ্বে এটা প্রশংসা পেয়েছে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল করে প্রধানমন্ত্রী দেখিয়ে দিয়েছেন, আমরাও পারি, যা বিএনপি সরকারের কাছে স্বপ্নও ছিল না।

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার ও দেশবিরোধী কিছু লোক দেশের বিরুদ্ধে নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিশ্বের কাছে দেশকে হেয় করতে চায়। তারা বলে, দেশ আজ শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যাবে, আপনার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেন। দেশ আজ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে, দেশের বিরুদ্ধে এসব গুজব অমূলক। দেশ আজ স্থিতিশীল অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে। বিশ্বে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করতে সংগ্রাম করেছে। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার আজ একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। আজ বিএনপি আমলের ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার যুগ চলে গেছে, আজিজ মার্কা ইসি নেই, তাই বোধহয় বিএনপির এত জ্বালা।

ফারুক খান বলেন, বিএনপিকে বর্তমানে জনগণ পলিটিক্যালি রিজেক্ট করেছে। আমাদের নির্বাচন কমিশন আইন মোতাবেক হয়েছে। তারা নির্বাচন পরিচালনা করবে। কিন্তু বিএনপি এখন বলছে তারা এ নির্বাচন কমিশন মানে না। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। কিন্তু মহামান্য আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছেন, সেটা তারা মানতে চায় না। এদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার কোনো সুযোগ নেই। জনসম্পৃক্ততা হারিয়ে বিএনপি এখন নানান ভুল ও বিভ্রান্তিকর কথা বলে চলেছে।

ফারুক খান আরও বলেন, বিএনপির সাতজন এমপি পদত্যাগ করে তাদের নিজ নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, বেইমানি করেছে। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন হবে। নির্বাচন উপলক্ষে সব দল এখন সক্রিয়। নির্বাচনের সময় বিশ্বের সবদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকে এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজন করে। স্বাভাবিকভাবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশেও তাই হবে। কিন্তু বিএনপি ও গুটি কতক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছে যা অসাংবিধানিক। বিএনপি রাষ্ট্র মেরামতের ফর্মুলা দিয়েছে, যা হাস্যকর বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ফারুক খান বলেন, আমরা সব মহামারি মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে সচল রাখতে সক্ষম হলেও বর্তমানে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে আমরা তা সফলভাবে মোকাবিলা করে চলেছি এবং বিশ্বকে আমরা দেখিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব থাকলে অতিমারি ও যুদ্ধের প্রভাবকে মোকাবিলা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব বিশ্বে দেশের মর্যাদা বেড়েছে। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি দেশের জনগণকে ভ্রান্ত তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তিতে ফেলতে চায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় এসে বারবার দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা বাংলাভাই, শেখ আবদুর রহমান ও সন্ত্রাসীদের উত্থান দেখেছি। সারা দেশে বোমা হামলার মাধ্যমে দেশকে পাকিস্তানপন্থি ও জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছে। ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদেরসহ সব বিরোধীকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করেছিল।

 

ভালো মানুষকে রাজনীতিতে আনতে হবে

সুলতান মনসুর তাঁর আলোচনায় বলেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসী আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নামে খ্যাত দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে আবুধাবিতে বৈঠক করে যারা বাংলাদেশের রাজনীতির পরিবর্তন চান সেই পাকিস্তানের ধারার রাজনীতি এই দেশে আসার আর কোনো সুযোগ নেই। যারা ওই রাজনীতি করেন তাদের বলব জীবনে বিএনপি রাজনীতিতে কোনো বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারেনি। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা ঠিক খুনি জিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আরোহণ করেছিল কিন্তু আন্দোল-সংগ্রাম করে মানুষের মন নিয়ে আন্দোলনের সফলতা তারা আনতে পারেনি। তারা দাউদ ইব্রাহিমের দালাল। বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র করছে আর যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করতে চায়। কাজেই নেত্রীকে (প্রধানমন্ত্রী) আহ্বান জানাব সংসদ নেত্রীকে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসতে চায় না, কেন আসতে চায় না এটা মূল্যায়ন করতে হবে। ভালো মানুষকে রাজনীতিতে আনতে হবে। তাদের এসে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যেভাবে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল আগামীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। স্লোগান তুলতে হবে রাজনীতি যার যার জাতির পিতা সবার। রাজনীতি যার যার জাতীয় রণধ্বনি জয় বাংলা সবার, স্বাধীনতা, সংবিধান সবার। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জাতির জনকের মাধ্যমে এই মহান সংসদে এই মহান সংবিধান রচিত হয়েছিল। এখানে এটাকে কারিগরি আর মেরামতের কোনো প্রয়োজন নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর