শিরোনাম
শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রাজশাহীতে এক বছরেই পুকুর খনন বেড়েছে তিন গুণ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীতে এক বছরেই পুকুর খনন বেড়েছে তিন গুণ

রাজশাহী জেলায় গত এক বছরে বাণিজ্যিক মাছ চাষের জন্য পুকুর ও দিঘির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। মাছের উৎপাদন বাড়ায় একে সাফল্য হিসেবে দেখছে মৎস্য অধিদফতর। তবে কৃষি দফতরের দাবি, বাণিজ্যিক এসব পুকুর খনন হয়েছে আবাদি জমিতেই। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করায় প্রতি বছরই জলাবদ্ধতা বাড়ছে। উৎপাদিত ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে জেলায় মোট জলাশয়ের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩০৯ হেক্টর। এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছের খামার ছিল ৯ হাজার ৪৬২ হেক্টর। ২০২২ সালে বাণিজ্যিক খামারের এলাকা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৩০৯ হেক্টর। জেলায় এখন বাণিজ্যিক মাছের খামারের সংখ্যা হলো ৫০ হাজারের বেশি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব মতে, জেলায় মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৩১ হেক্টর। এখন এক শতাংশও আবাদযোগ্য জমি পতিত নেই। ২০০৭-০৮ সালে জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৮০ হেক্টর। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯০ হাজার ৮১০ হেক্টরে। এখন আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হলো ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫৮ হেক্টর। এক দশকে আবাদযোগ্য জমি কমেছে ৩ হাজার হেক্টরের ওপরে। এর একটি বড় অংশ ব্যবহার হয়েছে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ করার জন্য পুকুর খননে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাদযোগ্য জমিতে পুকুর খননের সুযোগ নেই। তারপরও এক শ্রেণির মানুষ নানান কৌশলে পুকুর খনন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে বিল ও নিচু এলাকাকে অনাবাদি কিংবা এক ফসলি জমি হিসেবে দেখিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুকুর-দিঘি খনন করতে পূর্বানুমতি লাগে না। মাছ চাষিরা সেই সুযোগটা নিচ্ছেন বলে জানায় কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।

জেলার অনেক কৃষক জানান, ফসলি জমি কেটে আসলে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে না। মাছ চাষের ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এসব ঘের তৈরিতে চার থেকে পাঁচ ফুট মাটি কাটা হচ্ছে। কিন্তু পুকুর করতে হলে অন্তত ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে খনন করতে হয়। মাঝে কিছু সময়ের জন্য পুকুর খনন বন্ধ থাকলেও আবারও তা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে জেলার পবা, মোহনপুর, গোদাগাড়ী, বাগমারা ও দুর্গাপুর এলাকায়।   

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন জানান, অধিকাংশ পুকুর খনন করা হয়েছে নিষ্কাশন নালা, এমনকি ব্রিজ-কালভার্টের মুখে। ফলে হালকা বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে শুধু ফসল নষ্টই নয়, পুকুর খনন বেশি হওয়ায় গ্রামে গৃহপালিত প্রাণীও কমে যাচ্ছে। চারণভূমি সংকটে মানুষ গরু, মহিষ ও ছাগল পালন করতে পারছে না। কৃষকরা জানান, এসব অঞ্চলে মাছের উৎপাদন বাড়লেও ধান, পাট, পানের বরজ, মরিচ, শাক-সবজির উৎপাদন কমে গেছে।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল জানান, পুকুর খনন বন্ধে প্রায়ই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। আইন অমান্য করে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর