শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিশ্বাসের হাজারী গলিতে আস্থার চিড়

মিলছে ভেজাল, অনিবন্ধিত, নিম্নমানের ও অনুমোদনহীন বিদেশি ওষুধ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

বিশ্বাসের হাজারী গলিতে আস্থার চিড়

চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা ওষুধের বৃহত্তম বাজার হাজারী গলি। জীবনরক্ষাকারী ওষুধের জন্য এটির ওপরই মানুষের আস্থা দীর্ঘদিন। নির্ভয় ও চিন্তামুক্ত হয়ে এখান থেকে ওষুধ ক্রয় করেন অনেকে। কিন্তু এমন আস্থা ও নির্ভরশীল ওষুধের বাজারের ওপর মানুষের এখন আস্থার চিড় ধরেছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস। এখানে এখন নিয়মিতই মিলছে ভেজাল, নিম্নমানের, অনিবন্ধিত ও অনুমোদনহীন বিদেশি অবৈধ ওষুধ। পাওয়া যায় বিক্রয়-নিষিদ্ধ সরকারি ওষুধ এবং বিদেশি কসমেটিক্স পণ্য। মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালিত হলেও এর সুফল মেলে না।

অভিযোগ আছে, হাজারী গলির ওষুধকেন্দ্রিক একটি সিন্ডিকেড আছে। যারা ভেজাল ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়, সরকারি হাসপাতাল থেকে বিক্রয়-নিষিদ্ধ ওষুধ বের করে আনা, বিদেশি অবৈধ ওষুধ বিক্রি করে থাকে। যখনই এখানে অভিযান পরিচালিত হয় তখনই মেলে অবৈধ ওষুধ এবং এ সময় ফার্মেসিগুলোর মধ্যে কেউ পালিয়ে যায়, কেউ দোকান বন্ধ করে দেয়। ফলে অভিযানের সুফল শতভাগ মেলে না।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে হাজারী গলির ছবিলা কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার একটি এবং চতুর্থ তলার একটি গোডাউনের তালা ভেঙে প্রায় ৪০ লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ এবং ফিজিশিয়ান স্যাম্পল রাখাসহ নানা অভিযোগে তিনটি ফার্মেসিকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত ওষুধগুলো ভারত, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের তৈরি। পরে সেগুলো নষ্ট করা হয়। কয়েক বছর আগেও র‌্যাবের এক অভিযানে ৩১টি দোকানকে মোট ৫৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাজারী লেনে এক অভিযানেই প্রায় ৪০ লাখ টাকার অনিবন্ধিত ওষুধ জব্দ এবং তিনটি ফার্মেসিকে মোট ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। যে বাজারটি ওপর মানুষের এত আস্থা, সেখান থেকে এগুলো জব্দ করাটা দুঃখের। জীবনরক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে আরও সতর্ক ও মানবিক হওয়া উচিত। বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সহসভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, হাতেগোনা কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে হাজারী গলির সবার দুর্নাম হয়। এটি কাম্য নয়। বরং তাদের কারণে সৎ ব্যবসায়ীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই আমরা সব সময় অভিযানকে স্বাগত জানাই। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক শাখাওয়াত হোসেন আকন্দ বলেন, হাজারী গলির প্রতি মানুষের একটা বিশ্বাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু এখানে অভিযানে অবৈধ ও অনিবন্ধিত ওষুধ পাওয়া যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে এখন আস্থার চিড় ধরেছে। এ কারণে সৎ ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জানা যায়, হাজারী গলিতে বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় ২২টি মার্কেটে ৫০০টি ওষুধের দোকান আছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত ওষুদের দোকান ৩৫০টি। তাছাড়া বর্তমানে সমগ্র চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ফার্মেসি আছে ১১ হাজার। তবে এর বাইরে আরও কত অনিবন্ধিত ফার্মেসি আছে তার কোনো হিসাব কারও কাছে নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর