শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিএমডিএর ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ তিনজনের নামে মামলা দুদকের

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুরের দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের হয়। পরে নথি রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়েছে দুদক। দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএমডিএর সাময়িক বরখাস্ত সহকারী কোষাধ্যক্ষ খাবির উদ্দিনকে (৪৫)। এর মধ্যে একটি মামলায় তার সঙ্গে আসামি হয়েছেন বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী জি এফ এম হাসনুল ইসলাম (৫৫)। অন্য মামলাটিতে একমাত্র আসামি সাময়িক বরখাস্ত সহকারী হিসাবরক্ষক মতিউর রহমান (৫০)।

 তারা তিনজনই একসময় বিএমডিএর রাজশাহীর গোদাগাড়ী-২ জোন দফতরে কর্মরত ছিলেন। ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এখানে ৫০ লাখ ২৮ হাজার ১৫৮ টাকা আত্মসাৎ হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে নথিপত্র ?পুড়িয়ে দেন জড়িতরা।

মামলা তিনটিরই বাদী দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন। বিকালে তিনিই এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, খাবির উদ্দিন ও জি এফ এম হাসনুল ইসলাম ১৮০টি ব্যাংক চেক ঘষামাজা করে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৪ টাকার পরিবর্তে ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৫২ টাকা উত্তোলন করেন। পারস্পরিক যোগসাজশে ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাৎ করেন তারা। ২০১২ সালের ২৮ জুন থেকে ২০১৬ সালের ৫ মে পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে আগুন দিয়ে আলামত গায়েবও করে দেন আসামিরা। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

বাদী আরও বলেন, এ দুজনের বিরুদ্ধে দুদকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। এ নিয়ে গত বছর ১ নভেম্বর বিএমডিএতে অভিযান চালায় দুদক। পরদিন ২ নভেম্বর আবারও অভিযান চালানো হয়। দুই দফা অভিযানে বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করে দুদক। পরে সেগুলো পর্যালোচনা করে দুজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ১৬ জানুয়ারি এ দুজনের নামে এজাহার অনুমোদন দেয় দুদক। এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার মামলা হয়। মামলা নম্বর ১। পরে আদালতে মামলার নথি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে খাবির উদ্দিনের নামে দায়ের হওয়া অন্য মামলাটির নম্বর ২। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ১১৮ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। খাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ভেন্ডিং ইউনিট রিচার্জ থেকে আয় ১০ লাখ হাজার ৮৮ হাজার ২৪৮ টাকা এবং মানি রসিদ বহিমূলে আদায় ৫০ হাজার ৮৭০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। নথিপত্র যাচাইকালে পাঁচটি মানি রসিদ বইয়ের ১৯৪টি পাতা পায়নি দুদক।

অন্যদিকে আসামি মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমভিইউ রিচার্জ থেকে আয় ১ লাখ ২১ হাজার ৩২২ টাকা আদায় করে আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৩।

জানা গেছে, অভিযুক্ত জি এফ এম হাসনুল ইসলাম ২০০২ সালের দিকে উপসহাকারী প্রকৌশলী হিসেবে গোদাগাড়ী-২ জোনে দায়িত্বে ছিলেন। সহকারী প্রকৌশলী হিসেবেও ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত জোনপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওই সময় চেক জালিয়াতি করে বিএমডিএর প্রায় ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে হাসনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই কাণ্ডে তার সহযোগী ছিলেন আরেক সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ার হোসেন এখন নওগাঁর মান্দা জোনে কর্মরত। আর হাসনুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন রাজশাহীর মোহনপুর জোনে। এর আগে নওগাঁ রিজিওন, মোহনপুর ও রানীনগরে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে প্রতিটি এলাকায়ও অর্থের বিনিময়ে এসটিডব্লিউ স্থাপনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে।

দুই দফা তদন্ত করে দুজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতে সম্পৃক্ততা পায় বিএমডিএ। শেষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও অর্থ আত্মসাতে এ দুজনের সম্পৃক্ততা উঠে আসে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ ছিল মন্ত্রণালয়ের। এর পরও বহাল তবিয়তে আছেন তারা।

দুই সহকারী প্রকৌশলীর অপকর্মের সহযোগী সহকারী হিসাবরক্ষক মতিউর রহমান ও সহকারী কোষাধ্যক্ষ খাবির উদ্দিন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করে বিএমডিএ। কিন্তু দুই প্রকৌশলী থেকে যান বহাল তবিয়তে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর