রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইবিতে শিক্ষক নিয়োগে উপাচার্যের ফোনালাপের অডিও ক্লিপ ফাঁস

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের ফোনালাপের পাঁচটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় উপাচার্যের নির্দেশে ইবি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রেজিস্ট্রার। তার অবস্থান জানতে চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক সমিতি ও শাপলা ফোরাম। উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অস্থায়ী কর্মচারীরা। জানা যায়, শুক্রবার দিনের বিভিন্ন সময় ‘ফারাহ জেবিন’ নামে এক ফেসবুক আইডি থেকে তিনটি অডিও পোস্ট করা হয়। যার প্রথমটি ৬ মিনিট ১২ সেকেন্ডের, দ্বিতীয়টি ১ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড ও তৃতীয়টি ২ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের। পরের দিন ‘মিসেস আইডি’ থেকে চতুর্থটি ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ড এবং পঞ্চমটি ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়। প্রথম অডিওতে শোনা যায়, ‘অন্তত তিনজন যদিও থাকত। তিনজন দিয়ে তো প্রথমে বোর্ড বসাইছিলাম। কিন্তু এতে যে দুইজন এটা তো ধারণাই ছিল না। দুইজন জানলে পরীক্ষাটা নিতাম না।

আপনি এর পরে খালি তিনজন ক্যান্ডিডেট গোছান।’ দ্বিতীয় অডিওতে প্রার্থীকে কয়েকটি প্রশ্ন বলে দিতে শোনা যায়। এ ছাড়া তৃতীয় অডিওতে পরীক্ষার প্রশ্নসংক্রান্ত আলোচনায় শোনা যায়, ‘আমি তো আপনাকে সোর্সটাসহ দিয়েছি। দেখেন ওখানে। খুব চমৎকার করে একবারে চুম্বক লেখা আছে দশটা আইটেম।’ চতুর্থ অডিওতে বলতে শোনা যায়, ‘টাকা ছাড়া শুধু মেধায় চাকরি হয় না। একেক জনের কাছ থেকে ১৬-১৮ লাখ টাকা করে নেয়। শিক্ষক, কর্মকর্তা, ছাত্রও কন্টাক্ট নেয়। আমি প্রায় ২০ জনকে টাকা ছাড়াই নিয়োগ দিয়েছি। এতে আমার চেয়ার যাওয়ার মতো অবস্থা করে ছেড়েছে।’

অডিও ক্লিপ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড স্থগিতের বিষয় নিয়ে ও পরবর্তী বোর্ড গঠন নিয়ে নিয়োগপ্রার্থী ও বর্তমানে ওই বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক অলিউর রহমান অলির সঙ্গে এই আলাপন হয়। তবে অডিওতে অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তির কণ্ঠ শোনা যায়নি।

জানা যায়, গত ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহকারী অধ্যাপক পদে আবেদনকারীরা হলেন- ড. মো অলিউর রহমান, মোশারফ হোসেন ও বিউটি মন্ডল। এ সময় বোর্ডে তিনজন প্রার্থী উপস্থিত না হওয়ায় বোর্ড স্থগিত হয়। পরে গত ২ নভেম্বর আবারও পুনঃবিজ্ঞপ্তি দেয় কর্তৃপক্ষ। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি ওই নিয়োগ বোর্ডটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রথম অডিও ফাঁস হওয়ার পর শুক্রবার রাতে ইবি থানায় ভিসির নির্দেশে জিডি করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আলী হাসান। জিডিতে বলা হয়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে ফেক আইডি ‘ফারাহ জেবিন’ থেকে বিষয়টি ভাইরাল করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনায় উপাচার্যের অবস্থান জানতে চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম। শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, উপাচার্যের কথোপকথন শিক্ষক সমিতির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এতে শিক্ষক সমিতি হতবাক এবং বিস্মিত।

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, ‘ভিসি স্যার আমাকে জিডি করতে বলেছেন, তাই ইবি থানায় জিডি করেছি। অডিও পোস্টদাতার অ্যাকাউন্টটি আইডেন্টিফাই করতে জিডি করা হয়েছে। অডিও কার এটা তো আমি জানি না, এটা পুলিশ প্রশাসন বের করবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, ‘অডিওর শব্দগুলো আমার তবে কনটেন্টগুলো আমার না। আমি অন্যায় করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।’

প্রতিবাদে উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা : উপাচার্যের কার্যালয়ে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ। ফোনালাপ ফাঁসের প্রতিবাদে ও উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে তারা এ বিক্ষোভ করেন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্যের কার্যালয়ের তালা খুলে দেন তারা। সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রহমান টিটু বলেন, এই দুর্নীতিবাজ ভিসিকে আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে চাই না।’

প্রক্টর ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি। ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত নিয়ে ব্যস্ত আছি। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর