শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তারের জঞ্জালে চট্টগ্রাম নগর

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

তারের জঞ্জালে চট্টগ্রাম নগর

চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির খুঁটি ব্যবহার করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পিডিবির খুঁটি ব্যবহার করলেও কর্তৃপক্ষ থেকে মৌখিক বা লিখিত কোনো ধরনের অনুমতি নেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করে তারের জঞ্জাল তৈরির কারণে ঝুঁকির মধ্যে নগরীর ৭০ লাখ মানুষ। পিডিবি এসব তার সরানোর উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ ও সমন্বয়হীনতার কারণে সরানো যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব তারের কারণে হিট ফায়ারিং ও জাম্পারিং হয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘যেসব খুঁটিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তার ব্যবহার করছে তারা কোনো অনুমতি নেয়নি। আমি মাস ছয়েক আগে খুঁটি থেকে এসব তার সরানোর উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু তা সফল হয়নি। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা পেলে তবেই সফল হতে পারব। এখানে রাজনৈতিক নেতাদের সহযোগিতা বড় প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনজন ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কারা পিডিবির খুঁটি ব্যবহার করে তারের জঞ্জালে পরিণত করেছে তা দেখার। এ তালিকাটি তৈরি হওয়ার পর আমরা তাদের চিঠি দিয়ে এসব সরানোর জন্য বলব। এ বিষয়ে চসিক মেয়রের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সবার সমন্বিত সহযোগিতা পেলে নগরবাসীকে এ ঝুঁকি থেকে মুক্ত করা সম্ভব।’

সরেজমিন দেখা যায়, একেকটি খুঁটিতে এমন অসংখ্য ক্যাবল ঝুলছে, যার কিছু মাটিতেও গড়াগড়ি খাচ্ছে। মাঝেমধ্যে কিছু ক্যাবল যানবাহনের সঙ্গে লেগে ছিঁড়ে যায়, আর তা সড়ক ও ফুটপাতে পড়ে থাকে দিনের পর দিন। বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানো এসব ক্যাবলের কোনোটা ক্যাবল টিভির, কোনোটা ইন্টারনেট সংযোগের, আবার কোনোটা জেনারেটর লাইনের। অপরিকল্পিতভাবে এসব ক্যাবল বিদ্যুতের খুঁটিতে লাগানোর ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া শহরে ঘটা অগ্নিদুর্ঘটনার প্রায় ৭৫ শতাংশই বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার নানান সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। তার পরও সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে ৭০ লাখ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ক্যাবল ব্যবসা আর ইন্টারনেট ব্যবসা যারা নিয়ন্ত্রণ করে, তারা সবাই স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। যার কারণে পিডিবির অনুমতি ছাড়াই তারা নিজেদের ক্ষমতাবলে বিদ্যুতের খুঁটি অবৈধভাবে ব্যবহার করছে। পিডিবি এসব তার কেটে ফেলার উদ্যোগ নিলেও রাজনৈতিক তদবির আর হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহরকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত করতে নগরে এলোপাতাড়ি থাকা বিদ্যুৎলাইন মাটির নিচে নেওয়ার কাজটি দ্রুত হলেই মঙ্গল। এ ভূগর্ভস্থ লাইন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি সিস্টেম লস কমিয়ে রাষ্ট্র ও জনগণের উপকার করবে। ঝড়বৃষ্টিতেও বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যাহত হবে না।

ফায়ার সার্ভিসের একটি জরিপ নগরের        ৪২টি এলাকাকে অগ্নিকাে র জন্য অত্যন্ত  ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। বিশেষ করে নগরীর নিউমার্কেট, রেয়াজউদ্দীন বাজার, আগ্রাবাদ, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, টাইগার পাস, জামাল খান, আন্দরকিল্লা, লালখান বাজারসহ নগরজুড়ে চিত্র একই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর