বুধবার, ১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

সিলেট বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ

♦ সম্মেলনের তারিখ পরিবর্তন ♦ চাপের মুখে সরে দাঁড়ালেন সেলিম

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সম্মেলন সামনে রেখে সিলেট মহানগর বিএনপিতে নতুন মেরুকরণ ঘটেছে। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মুক্তাদির আহমদ ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলয়ে শুরু হয়েছে নতুন হিসাবনিকাশ। শেষ মুহূর্তে এসে সভাপতি পদে প্রার্থিতা ঘোষণাকারী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম সরে দাঁড়িয়েছেন। খন্দকার মুক্তাদিরসহ দলের কয়েকজন নেতার অনুরোধে তিনি গতকাল সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। মুক্তাদির বলয়ের সমর্থন নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন। আর আরিফ বলয়ের নীরব সমর্থন নিয়ে একই পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বর্তমান সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে খন্দকার মুক্তাদির বলয়ের আর্শীবাদ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরী। অন্যদিকে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও চারবারের সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম। এমদাদ ও শামীম উভয়েই একসময় খন্দকার মুক্তাদির বলয়ের হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তাদির বলয় বেছে নিয়েছে এমদাদকে। আর শামীমকে নিজেদের বলয়ে টানার চেষ্টা করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী ও ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীর সমন্বিত গ্রুপ। সিলেট মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সম্মেলনের তারিখ পিছিয়ে ১০ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ৪ মার্চ সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল।

সূত্র জানান, ১০ মার্চ সম্মেলনে ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক। সিটি সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটি কমিটি থেকে ৭১ জন করে মোট ১ হাজার ৯১৭ জন কাউন্সিলর নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। এ বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী বলয় থেকে গ্রিন সিগন্যালও পান তিনি। ২৩ জানুয়ারি সেলিম ২৭ ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীর সঙ্গে মতবিনিময় করে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। এরপর তিনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় শুরু করেন এবং ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে সোমবার রাতে খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের নেতৃত্বে বদরুজ্জামান সেলিমের বাসায় যান বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী। তারা সেলিমকে সম্মেলনে সভাপতি প্রার্থী না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। একপর্যায়ে সেলিম তাদের সভাপতি পদে সংগৃহীত মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ওই সময় খন্দকার মুক্তাদিরের সঙ্গে সভাপতি প্রার্থী নাসিম হোসাইনও উপস্থিত ছিলেন। গতকাল খন্দকার মুক্তাদির বলয়ের আশীর্বাদ নিয়ে  সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন নাসিম হোসাইন। সূত্র জানান, বদরুজ্জামান সেলিম সভাপতি পদে প্রার্থী না হতে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলয় ও ঢাকা থেকে কয়েকজন নেতা চাপ দেন। তাকে কেন্দ্রে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। চাপে পড়ে একপর্যায়ে সেলিম সভাপতি পদে নির্বাচন করা থেকে সরে দাঁড়ান। সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ স্পষ্ট করতে নারাজ বদরুজ্জামান সেলিমও। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি না এটাই সত্য। আপাতত এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।’

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন দুই যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদ হোসেন চৌধুরী ও ফরহাদ চৌধুরী শামীম। একসময় দুই নেতাই খন্দকার মুক্তাদির বলয়ের সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুক্তাদির বলয় বেছে নিয়েছে এমদাদকে। আর বলয়ের বাইরে প্রার্থী হয়েছেন শামীম। দলীয় সূত্র জানান, শামীমকে নিজেদের বলয়ে ভেড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে আরিফ-শাহরিয়ার সমন্বিত বলয়। সভাপতি পদে মিফতাহ সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক পদে শামীমকে বিজয়ী করতে তারা নানান পরিকল্পনা আঁটছেন। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন চারজন। তাঁরা হলেন- মহানগর বিএনপির সাবেক ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম নাচন, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাফেক মাহবুব, ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ শফি শাহেদ ও বিএনপি নেতা মোস্তফা কামাল ফরহাদ।

সর্বশেষ খবর