বুধবার, ২২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

সংবাদপত্র শিল্প বাঁচাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে

প্রাক-বাজেট আলোচনায় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে এর বহুমুখী প্রভাব পড়ছে জীবনযাত্রায়। ফলে নিত্যপণ্যের দামও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে এ পণ্যটির দাম এখন কমেছে। এ জন্য জ্বালানি তেলের দাম কমানো উচিত বলে মনে করেন দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহীরা। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা, ঋণ জালিয়াতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সংবাদপত্র শিল্প বাঁচানোর জন্য এ খাতে সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। অনলাইন প্লাটফরমে গতকাল অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব কথা বলেন পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক ও টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী ও বার্তাপ্রধানরা। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, আমাদের অর্থনীতির প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক নাইমুল ইসলাম খান, চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এতে বক্তব্য রাখেন। অর্থ বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহম্মদ আহসানুউল্লাহ গত অর্থবছরের প্রাক-বাজেট মিডিয়াপ্রধানদের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন তুলে ধরেন। এ সময় গণমাধ্যম বক্তিত্বরা বলেন, এখনই দেশে তেল ও গ্যাসের দাম কমানো উচিত। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম কমে গেছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তারা প্রশ্ন রেখে বলেন, ব্যাংকের বড় ঋণ গ্রহীতাদের কেন এত ঢালাও ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসব ঢালাও ঋণ সুবিধার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, কীভাবে সরকার সম্পদ অর্জন করবে। তার একটা রোডম্যাপ থাকতে হবে। এ সম্পদ আর আয় সরকার জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে পারবে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার এখন কৃচ্ছ্্রতা সাধন করে যাচ্ছে। এ জন্য সরকারের খরচ কমাতে হচ্ছে। এ অবস্থা তো সব সময় থাকবে না। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে আসছে। তাই দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যটা বিবেচনার দাবি রাখে। তেলের দাম একটু কমিয়ে দিলে অর্থনীতিতে এর বেশ প্রভাব পড়বে। যখন দুবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়, তখন প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ১১০ ডলার, এখন তা কমে ৭২ থেকে ৭৩ ডলারে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, বড় বড় ঋণ গ্রহীতারা অনেক ধরনের বিশেষ ঋণ সুবিধা পাচ্ছে। এসব সুবিধা আর কত দিন দেওয়া হবে। বড় খেলাপিদের ঋণ রিশিডিউলের সুবিধা দেওয়ার ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করতে হবে। পত্রিকায় দেখেছি, আগামী বাজেট হবে ৭ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার। এ বড় বাজেটে রেভিনিউ আসবে কোথা থেকে, এর একটা বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আগামী বাজেটে ভর্তুকি আর সুদের বরাদ্দ বাবদ টাকা রাখা হবে, তা যেন যৌক্তিক হয়।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। এ পর্যন্ত ব্যাংকে যেসব টাকা আটকে গেছে সেগুলো কীভাবে উদ্ধার করা যায়। মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যেসব টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে, তা কীভাবে ফেরত আনা যায়, সে বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতি বের করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের সংবাদপত্রকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সরকারের সব ধরনের সুবিধা দিতে হবে। কারণ এটা একটা সেবা খাত। গার্মেন্টের রপ্তানি থেকে আমাদের ট্যাক্স, আমদানি কর বেশি দিতে হচ্ছে। এটা কমাতে হবে। বিজ্ঞাপন বিলের ওপর ৪ শতাংশ ট্যাক্স কমাতে হবে। দেশীয় নিউজপ্রিন্টের ওপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স কেন নিতে হবে। দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে হবে। এখন বিজ্ঞাপন গুগলে চলে যাচ্ছে। সেখানে কর বাড়িয়ে সরকার আয় করতে পারে। এ জন্য এনবিআরকে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে। ব্যাংকের ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে জনগণ এক ধরনের আতঙ্কে আছে। কিন্তু ব্যাংক বা অন্য কর্তৃপক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা বা চিত্র কখনো দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক খাত কী অবস্থায় আছে এবং সেটাকে আসলে কতটুকু আমরা ওয়ার্কেবল করতে পারব, এ বিষয়ে বাজেটে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আমাদের অর্থনীতির প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক নাইমুল ইসলাম খান বলেন, দেশীয় নিউজপ্রিন্টের প্রতি টনের দাম এখন ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। গত বছরই এর দাম ছিল ৩৫ হাজার টাকা। দেশীয় নিউজপ্রিন্টের দাম এত বাড়ল কেন?

এটা সরকারকে অনুসন্ধান করতে হবে। এ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কমাতে হবে। দেশের ব্যাংকের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে অনেকেই। এরা কি সরকারের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে। বাজেটে এ নিয়ে ব্যাখ্যা থাকতে হবে।

চ্যানেল আইয়ের বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ; এই দুই সংকটেই দেশের অর্থনীতি অনেকটা টিকে আছে কৃষির ওপরে। কৃষিতে বরাদ্দ অনেক বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কৃষি গবেষণা, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায়, স্মার্ট কৃষিপণ্য সহজলভ্য করা, কৃষি বৈচিত্র্যকরণ, পোলট্রি শিল্প ও খামার খাতে। কৃষির উপখাত পোলট্রি ও খামার, ফিশারিজসহ প্রাণিসম্পদে খাদ্য ব্যয় দুই গুণের বেশি হয়ে গেছে। ৩০০ টাকা কেজি দরে ব্রয়লার খেতে হচ্ছে। এই প্রাণিজ খাদ্যের দাম কমানোর জন্য এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংকগুলো এনজিওর মাধ্যমে আর কৃষি ঋণ দিতে পারবে না। কোনো ব্যাংক কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে সেই টাকা আমরা গবেষণা, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ব্যয় করব। এখন এর পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এ ব্যাপারে ১২টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর