সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। সারা দিন রোজা রাখার পর সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করার চট্টগ্রামের যে ঐতিহ্য তা এখনো দৃশ্যমান। প্রথম রোজা থেকে নগরীর ছোট-বড় প্রায় সব মসজিদে হরেক পদের ইফতারির ব্যবস্থা থাকছে। আর এ ইফতার আয়োজনে অংশ নেন ধনী, গরিব, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রিকশাচালকও। কোনো ভেদাভেদ নেই, সবাই এক কাতারে বসে ইফতারে শরিক হচ্ছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামের পরিচালক বোরহান উদ্দীন মো. আবু আহসান বলেন, নগরের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে প্রতিদিন ১৫০০, জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে ৭০০-৮০০ ও কল্পলোক মডেল মসজিদে আমরা ইফতারের আয়োজন করে থাকি। এরমধ্যে কল্পলোক মসজিদে স্থানীয় মুসল্লিরাও আয়োজন করেন। আন্দরকিল্লা জামে মসজিদের খতিবের একান্ত প্রচেষ্টায় হাজারো মানুষের ইফতার আয়োজন করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে বরাদ্দ আসে শুধু জমিয়াতুল ফালাহ ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের জন্য। এর বাইরে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে এ আয়োজন করেন। আমরা এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে চাই ভবিষ্যতেও।
২০০১ সালে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের তৎকালীন খতিবের আগ্রহে মক্কা-মদিনার আদলে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে রমজান উপলক্ষে রোজাদারদের ইফতারির আয়োজন শুরু করা হয়। প্রথমে ছোট পরিসরে করলেও ২০০৭ সাল থেকে এ আয়োজন রূপ নেয় বৃহত্তর আকারে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার রোজাদার ইফতার করেন এখানে। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের খতিবের একান্ত সচিব হাছান মুরাদ বলেন, প্রতিদিন মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে এবং সবার জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়।
দ্বিতীয় রমজানে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতার করতে এসেছেন ভ্রাম্যমাণ হকার জসিম উদ্দীন। তিনি বলেন, প্রতি বছর রমজানে আমি এখানেই ইফতার করে থাকি। করোনার সময় না এলেও এর আগেও বেশ কয়েক বছর এসেছি। সারা দিন বিক্রির পর সন্ধ্যার সময় এখানে লোকজন আসতে থাকে আশপাশ থেকে। ইফতারের সময় হলে সবাই মিলেমিশে ইফতার করে। এ সময় এ আয়োজন আমাদের মতো হকারদের অনেক উপকারে আসছে।নগরের জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদেও নিয়মিতভাবে রোজাদারদের জন্য আয়োজন করা হয় ইফতারের। প্রতিদিন এ মসজিদেও হাজারো রোজাদার স্বাচ্ছন্দ্যে ইফতার করতে আসেন। পাশাপাশি আশপাশের লোকজন, রিকশাচালক, ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও ভবঘুরেসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন ইফতারে শরিক হয়ে থাকেন।
জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতি বছর রমজানে এ ইফতারির আয়োজন করা হয়। এরপর ২০১১ সালে ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহায়তায় বাড়তে থাকে ইফতারের আয়োজন ও লোকসংখ্যা। প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার রোজাদার এই মসজিদে ইফতার করে আসছেন। বড় মসজিদের পাশাপাশি নগরের মিছকিন শাহ মাজার, অলি খাঁ মসজিদ, গরিব উল্লাহ শাহ মাজার মসজিদেও ইফতারের আয়োজন করা হয়।